ভারতের কেরালা রাজ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিখ্যাত তীর্থস্থান সবরিমালা মন্দিরে চাঞ্চল্যকর এক স্বর্ণচুরি মামলার প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। রাজ্যের হাইকোর্ট জানিয়েছে, মন্দিরের কিছু দেবমূর্তি থেকে সোনার আবরণ খুলে নেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্দিরে ভক্তদের দান করা স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে দেবমূর্তি ও অলঙ্কার সাজানো এক প্রচলিত রীতি। কিন্তু লাখো ভক্তের শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দু এই মন্দিরে এমন চুরি ভক্তদের হতবাক করে দিয়েছে।
কেরালা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে। এছাড়া, মন্দিরের সাবেক সহকারী পুরোহিত উন্নিকৃষ্ণন পট্টি সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিচারপতি রাজা বিজয়ারাঘবন ভি ও বিচারপতি কে.ভি. জয়কুমারের বেঞ্চ এই মামলার তদন্ত পর্যবেক্ষণ করছেন। সেপ্টেম্বর থেকে তারা নিয়মিত শুনানি নিচ্ছেন।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু দুটি দ্বারপালক বা দেবালয়ের দরজার রক্ষক মূর্তি। আদালত-নিযুক্ত বিশেষ কমিশনারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই দুটি মূর্তির অনেক জায়গায় সোনার আবরণ খুলে ফেলা হয়েছে।
মন্দিরের নথি অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে শিল্পপতি বিজয় মাল্যর অনুদান থেকে পাওয়া ৩০.২৯১ কেজি সোনা দিয়ে দেবমূর্তি, স্তম্ভ, দরজার খিলান ও অলঙ্করণে সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালে সাবেক সহকারী পুরোহিত উন্নিকৃষ্ণন পট্টিকে মূর্তিগুলো মন্দিরের বাইরে নিয়ে গিয়ে নতুন করে সোনায় মোড়ানোর অনুমতি দেয় ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড।
দুই মাস পর ফেরত আনা হলেও মূর্তিগুলোর ওজন মাপা হয়নি। পরে তদন্তে দেখা যায়, সেগুলো অনেক হালকা। প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৪.৫৪ কেজি সোনা উধাও হয়ে গেছে।
বিচারপতিরা মামলাটির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘এটি লুটপাট ও ডাকাতি।’
অভিযুক্ত পুরোহিত উন্নিকৃষ্ণন পট্টি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
গ্রেপ্তারের সময় সাংবাদিকদের তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই।’
এসআইটি আরও দুই বোর্ড কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বোর্ডের সভাপতি পি.এস. প্রসান্তও তদন্তের আওতায় আছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, ‘বর্তমান বোর্ডের সময় এই ঘটনা ঘটেনি। আমরা আদালতের তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি।’
আদালত আরো জানিয়েছেন, মেরামতের পর পুরোহিত পট্টি মন্দির বোর্ডের ‘অনুমতিতে’ ৪৭৪.৯ গ্রাম সোনা নিজের কাছে রেখে দেন। এমনকি তিনি এক ই-মেইলে বোর্ডকে অনুরোধ করেছিলেন এই অতিরিক্ত সোনা ‘পরিচিত এক মেয়ের বিয়েতে ব্যবহারের’ অনুমতি দিতে।
একে ‘গভীরভাবে বিরক্তিকর’ মন্তব্য করে কেরালা হাইকোর্ট বুধবার তদন্তের পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করেছে। আদালত জানিয়েছে, ‘যে ই জড়িত থাকুক, তার প্রভাব বা পদমর্যাদা যাই হোক, কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। এই ঘটনায় দোষী প্রত্যেক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এমকে/এসএন