কী অসাধারণ বৈপরীত্যই না দেখা গেল! ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড যখন লিভারপুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন থেকেই কনর ব্র্যাডলিকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বিধাতার কি লিলা, দু’জনের মুখোমুখি হওয়ার মঞ্চও প্রস্তুত হয়ে গেল দ্রুতই। আর সেই মঞ্চে অ্যানফিল্ডের ভালোবাসার জোড়ে উজ্জীবিত ছিলেন কনর ব্র্যাডলি, যেখানে ‘ঘরের ছেলে’ আর্নল্ডকে হজম করতে হতে হয়েছে অল রেডদের ঘৃণা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গতকাল রাতে রিয়াল মাদ্রিদকে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটির আক্রমণভাগকে একরকম ভোঁতাই করে দেন ব্র্যাডলি। রিয়ালের বাম পাশ থেকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে একচুল ছাড়ও যে দেননি এই আইরিশ রাইট-ব্যাক। যতবারই আক্রমণে উঠেছেন, ব্র্যাডলির কাছেই পরাস্ত হতে হয়েছে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে।
ম্যাচের আগে অ্যানফিল্ডের দেয়ালচিত্রে লেখা হয়েছিল ‘আদিওস এল রাতা’ যার অর্থ ‘বিদায়, ইঁদুর’। এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া আর্নল্ডের প্রতি প্রবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে লিভারপুলের সমর্থকরা। ইংলিশ ক্লাবটির অনেক সমর্থকের চোখে এই রাইট-ব্যাক ‘বিশ্বাসঘাতক’।
আর্নল্ডের পজিশনেই খেলা ব্র্যাডলি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সমর্থকদের সেই ক্ষোভে যেন আরও আগুন ঢালেন। প্রতিপক্ষের রক্ষণে ত্রাস ছড়াতে যার জুড়ি মেলা ভার, সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে ব্র্যাডলি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন যে ব্রাজিলিয়ান তারকা হয়ে উঠেছিলেন নিছক দর্শক। শারীরিক দৃঢ়তার সঙ্গে দারুণ আত্মবিশ্বাসে তিনি পুরোপুরি ছাপিয়ে যান ভিনিসিয়ুসকে।
ব্র্যাডলির প্রতিটি ট্যাকলে অ্যানফিল্ডে গর্জে ওঠে উল্লাসে। গ্যালারি থেকে ‘ব্র্যাডলি, ব্র্যাডলি’ স্লোগান—শুধু তার পারফরম্যান্সের জন্যই নয়, বরং প্রাক্তন হয়ে যাওয়া আর্নল্ডকেও যেন স্মরণ করিয়ে দিল নতুন নায়ক এসেছে, পুরনোটা এখন শুধুই ইতিহাস।
ব্র্যাডলির এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ করেছে লিভারপুল কোচ আর্নে স্লটকেও, কনর ব্র্যাডলি অসাধারণ ছিল। ভিনিসিয়ুসের মতো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে এতবার ‘ওয়ান-ওয়ান’ অবস্থায় লড়াই করা সহজ নয়, কিন্তু সে ছিল দুর্দান্ত।’
আগের মৌসুমেও রিয়ালের বিপক্ষে দারুণ খেলেন ব্র্যাডলি। তবে এবার সেই পারফরম্যান্সকেও ছাড়িয়ে যান ২২ বছর বয়সী লিভারপুলের নতুন তারকা। অল রেডদের কোচ আর্নে স্লট যোগ করেন, ‘গত মৌসুমে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছিলেন, কিন্তু ৮০ মিনিটের পর চোটের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সেবার। এবার, ভিলার বিপক্ষে ৯০ মিনিট খেলার মাত্র তিন দিন পর, সে আবারও অসাধারণ তীব্রতায় পুরো ৯০ মিনিট ভিনিসিয়ুসকে সামলেছে।’
অথচ রিয়ালের বিপক্ষে মাঠে নামারই কথা ছিল না ব্র্যাডলির। একই পজিশনের জেরেমি ফ্রিম্পংয়ের চোটে রক্ষণভাগের ডানপাশ সামলানোর দায়িত্ব পান তিনি। সেই দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেছেন তিনি। ফুটবল সাইট ‘সোফা স্কোর’ এর তথ্যমতে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচে ট্যাকলে শতভাগ সফল ছিলেন ব্র্যাডলি, সম্পন্ন করেন। একটি ইন্টারসেপশন করেন, সাতটি এরিয়াল ডুয়েল জেতেন। বল পুনরুদ্ধার করেন সাতবার এবং দুইটি ক্লিয়ারেন্স করেন ব্র্যাডলি।
এবি/টিকে