সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘রাজনীতি একটা গরম বিষয়। এখানে আপনি যদি খুব নরম আচরণ করেন বা রাজনৈতিক পরিবেশে যদি দেখেন খুব ডিপ্লোম্যাটিক বিষয় বা কূটনীতির বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে, শোরগোল কম হচ্ছে, আপনি ধরে নেবেন যে পর্দার আড়ালে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটছে। আমাদের দেশের যে রাজনীতি, সেই রাজনীতির মধ্যে যে কূটকৌশল, এগুলোর সঙ্গে আপনি জিলাপির তুলনা করতে পারেন।’
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া ভিডিওবার্তায় রনি বলেন, ‘জিলাপির বৈশিষ্ট্য বলা হয় যে, জিলাপিতে আড়াইটি প্যাঁচ দেওয়া হয়।
দুটো চক্কর দিয়ে আবার মাঝামাঝি আরেকটা টান দিয়ে এই জিলাপির ভাঁজকে ক্লোজ করা হয়। তো আড়াইপ্যাঁচের এই জিলাপি এখন আর নেই। এখন জিলাপিতে বহু প্যাঁচ হয়ে গেছে। কিন্তু বাঙালি কালচারে এই আড়াইপ্যাঁচটি রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই কালচারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের রাজনীতিতে গরম নরম একটা ভাব থাকবে। এখানে আপনাকে যেভাবে একটা ফ্যাসিবাদী চরিত্র দিয়ে দেবে, আপনি ইচ্ছা করলে হিটলারের মতো বা মুসোলিনির মতো বাঙালিকে খুব বেশিদিন বশে রাখতে পারবেন না। এই বাংলাদেশের বহু মানুষ চেঙ্গিশ খান হওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। তো সেই দিক থেকে আপনি যদি শেখ হাসিনার সর্বশেষ জমানা দেখেন, তাহলে আপনি দেখবেন যে দু দুটো নির্বাচন করেছেন।
কিন্তু তিনি আরেকটা নির্বাচন করে সেটার ইতি ঘটেছে। তো আমাদের বর্তমান রাজনীতিতে এখন আড়াই প্যাঁচের খেলা চলছে, গরম গরম জিলাপির যে আবহাওয়া, সেই আবহাওয়াটা চলছে।’
রনি বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপি এবং জামায়াত দুটো বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। কিন্তু এ দুটো দলের মধ্যে একটা রেখা দেওয়ার মতো বা আড়াই প্যাঁচ দেওয়ার মতো সেই শক্তিশালী দল নেই। অতীতের কথা চিন্তা করেন।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ যখন রাজনীতি করতো, সেখানে আড়াইপ্যাঁচ দেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি ছিল, জামায়াত ছিল। আর এখন দুটো রাজনৈতিক ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে তারা।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির সেই জিলাপি এখন তৈরি হচ্ছে না। এর কারণ হলো, যেখানে বিএনপির ৩৫% ভোটার আছে, সমর্থন আছে; সেখানে যদি জামায়াতের জনপ্রিয়তা এবং ভোটার সংখ্যা দেখেন, সেটি নট মোর দ্যান ৫%। ফলে ৩৫% ভোটারকে দিয়ে যদি একটা বৃত্ত তৈরি করেন, আর ৫% ভোটার দিয়ে আরেকটা বৃত্ত তৈরি করেন; এবং এই দুই বৃত্তের মাঝামাঝি যদি আপনাকে একটা রেখা টানতে হয়, তাহলে এরকম একটা দল দরকার, যে অন্তত ৮-৯% ভোটার টানতে পারে। এ কারণে যে বৃত্ত তৈরি হলো, সেই বৃত্তের মাঝামাঝি জিলাপির মতো একটা বন্ধন তৈরি করতে পারবে না।
রাজনীতির ক্ষেত্রে, সমাজের ক্ষেত্রে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে এইভাবে একটা বৃত্ত আছে, সেই বৃত্তের বাইরে আপনি যেতে পারবেন না।’
পিএ/টিএ