ব্রাজিলের অ্যামাজনের বেলেমে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-৩০’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অ্যামাজন বন রক্ষার দায় ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ জোরদার করাই এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।
লাতিন আমেরিকার শক্তিধর দেশ ব্রাজিল—যার জনসংখ্যা ২১ কোটি ৩০ লাখ এবং অর্থনীতির আকারে বিশ্বের দশম—একই সঙ্গে অষ্টম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারকও বটে। কিন্তু দেশের আসল পরিচয় তার প্রকৃত সম্পদ অ্যামাজন বনাঞ্চল। এই বন বর্তমানে রেকর্ড খরা, দাবানল, গবাদি পশুপালক ও সয়াবিন চাষিদের দখলদারিত্বে জর্জরিত। তবুও এটি বিশ্বের ‘ফুসফুস’ এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আশ্রয়স্থল হিসেবে টিকে আছে।
প্রায় ৫০ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এবারের কপ ৩০ সম্মেলনে। আমাজনের হৃদয়ে এত বড় আয়োজনের সিদ্ধান্ত প্রথম থেকেই বিতর্কিত ছিল, তবে ব্রাজিল সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সম্মেলনটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি দেশকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জমা দিতে হয়। এবারের সময়সীমা শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে, কিন্তু অল্প কয়েকটি দেশ সময়মতো তা জমা দিতে পেরেছে। কপ ৩০ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি দেশ তাদের পরিকল্পনা দিয়েছে। তবে তা এখনো পর্যাপ্ত নয়।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের পাঁচটি লক্ষ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ দ্রুত দেওয়ার দাবি তুলছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তহবিল সম্পূর্ণ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সরাসরি অর্থ পেতে পারে।
অন্য অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করা, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়টি যুক্ত করা।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান পরিকল্পনাগুলো ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নিঃসরণ মাত্র ১০ শতাংশ কমাতে পারবে, অথচ ১.৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রার সীমা রক্ষায় অন্তত ৬০ শতাংশ হ্রাস প্রয়োজন। ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে ২.৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত।
এবারের কপ-৩০ সম্মেলনের নিজেদের অর্জন কতটুকু হবে তা দেখতে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলেকে।
এমআর/টিকে