বিনিয়োগ করতে চায় জাপান, বড় সমস্যা দুর্নীতি : জেট্রো

চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটলেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহে ভাটা পড়েনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে; বরং আগ্রহ আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজুইকি কাতাওকা। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বাসস।

সাক্ষাৎকারে কাজুইকি কাতাওকা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্পষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, এই ধারণা সঠিক নয়। জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার পরিধি সক্রিয়ভাবে বাড়াচ্ছে এবং এই দেশের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছে।

জেট্রো জাপান সরকারের একটি বহির্বাণিজ্য সংস্থা, যা জাপান ও অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করে। প্রবল আগ্রহের প্রমাণ হিসেবে কাতাওকা জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বা ব্যবসা প্রসঙ্গে তথ্য জানতে ঢাকার জেট্রো অফিসে জাপানি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের তথ্য অনুসন্ধানে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, জেট্রোর আন্তর্জাতিক অফিসগুলোর মধ্যে ঢাকার অফিস এখন অন্যতম ব্যস্ততম অফিস হিসেবে স্বীকৃত। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কতটা বেশি।

কাতাওকা জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় সুমিতোমো কর্পোরেশন পরিচালিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বিএসইজেড) জাপানের ‘এনআইসিসিএ কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড’ একটি নতুন কারখানা নির্মাণ করছে। সেখানে তারা একটি বন্ডেড গুদাম স্থাপন করবে। এটি বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর চলমান বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

এছাড়া, লায়ন কর্পোরেশন স্থানীয় কল্লোল গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে থালা-বাসন পরিষ্কারের সাবান ও টুথপেস্ট তৈরির কারখানা স্থাপন করছে বলেও জানান তিনি।

২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই পরিচালিত জেট্রোর এক জরিপের কথা উল্লেখ করে কাতাওকা বলেন, জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এমন ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। এটি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর বিশ্বব্যাপী এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, এই সম্প্রসারণের আগ্রহ মানেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনার প্রতিফলন।

রপ্তানিমুখী উৎপাদন এখনো প্রধান ব্যবসা হলেও, বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহের একটি বড় কারণ হলো এই দেশের আকর্ষণীয় অভ্যন্তরীণ বাজার। অনেক জাপানি কোম্পানি এখন এদেশের ভোক্তা বাজারে নজর দিচ্ছে। উচ্চ আমদানি শুল্ক এড়াতে স্থানীয়ভাবে কারখানা স্থাপনের চিন্তাও করছে তারা।

ঢাকায় জাপানি কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে কাতাওকা বলেন, বিনিয়োগের প্রবল আগ্রহ থাকলেও ক্ষুদ্র পর্যায়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খারাপও হচ্ছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি, বিশেষ করে কাস্টমস পর্যায়ে। অন্যান্য বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতায় সময়ক্ষেপণ।

কাতাওকা বলেন, ওয়ার্ক পারমিট ও নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেতে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এই বিলম্বের কারণে আর্থিক ক্ষতির কথাও তুলে ধরেন কাতাওকা। বলেন, পারমিট না থাকলে বিদেশিরা এখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বা টাকা তুলতে পারেন না।

তবে, তিনি উল্লেখ করেন, ছাড়পত্রের বিষয়টি সমাধানের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা ছাড়পত্র ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সেখানে ২১ দিনের মধ্যে কোনো আপত্তি না উঠলে আবেদনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত হবে।

সেইসঙ্গে জেট্রোর এই কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জোর দিয়ে বলেন, ব্যবসা বাড়াতে হলে সরকারের নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুবই জরুরি।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তবে রাজনীতি অবশ্যই ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে।

কাতাওকা আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের দিকে বিনিয়োগকারীরা গভীর নজর রাখছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিনিয়োগকারীরা খুশি হবেন।

এসময় তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। কারণ হিসেবে কাতাওকা বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই দীর্ঘস্থায়ী হয়।

নতুন সরকার অর্থনৈতিক নীতি ও প্রণোদনা ঘোষণা করলে আরও বিনিয়োগ আসবে। অনেক জাপানি কোম্পানিও ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

শেষে তিনি বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয়। অভ্যন্তরীণ বাজারও দিন দিন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এ কারণেই ঢাকার জেট্রো অফিস বিনিয়োগ অনুসন্ধানের আগ্রহী অসংখ্য জাপানি কোম্পানির সাড়া পাচ্ছে।

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দেব না : নুর Nov 08, 2025
img
১৩ নভেম্বরের লকডাউন কর্মসূচি দেওয়া পাগলের প্রলাপ: সালাহউদ্দিন Nov 08, 2025
ইসলামের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Nov 08, 2025
img
ধানের শীষের বিজয় মানেই উন্নয়ন : চৌধুরী নায়াব ইউসুফ Nov 08, 2025
আনুশকা শর্মা মুখ্য ভূমিকায়, বড় পর্দায় ফেরার প্রস্তুতি Nov 08, 2025
অশালীন নাচে মালাইকা, সমালোচনার ঝড়ে হানি সিংও Nov 08, 2025
প্রিয়াঙ্কা-সোনমের শুভেচ্ছায় ভাসলেন ক্যাটরিনা Nov 08, 2025
অভিষেক শর্মার আগ্রাসী ব্যাটিং, টিম ডেভিডকে ছাড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড Nov 08, 2025
ইউরোপে হারের পর লা লিগায় ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত রিয়াল Nov 08, 2025
আইসিসি নিয়ম বদলে দিচ্ছে অলিম্পিকের ক্রিকেটের চেহারা Nov 08, 2025
এই গণভোটের মধ্য দিয়ে কি আইন প্রণীত হয়ে যাবে? : সালাহউদ্দিন আহমেদ Nov 08, 2025
সংস্কারের বিষয়গুলোকে জনগণকে জানাতে গণভোটের প্রয়োজন Nov 08, 2025
আমজনতার দলকে নিবন্ধন দিতে ইসিকে হিরো আলমের আল্টিমেটাম Nov 08, 2025
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে 'ভাঙচুর ও লুটপাটের' অভিযোগ! Nov 08, 2025
img
টাঙ্গাইলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাতিলের মিছিল Nov 08, 2025
img

সৌদি প্রো লিগ

রোনালদো ও ফেলিক্সের দুর্দান্ত গোল, আটে আট আল-নাসরের Nov 08, 2025
img
ভেনেজুয়েলাকে সামরিক সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া Nov 08, 2025
img
একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি থেকে চুপিসারে সৈন্য প্রত্যাহার করলো ভারত Nov 08, 2025
img
বিএনপিই পারবে সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে : দুলু Nov 08, 2025
img
কামিন্স ফিরলেও আমিই অধিনায়ক থাকবো: মিচেল মার্শ Nov 08, 2025