ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন কিছু মুখ আছে, যাদের দেখা মানেই দর্শকের মনে জেগে ওঠে এক নির্ভেজাল বিশ্বাস। রঞ্জিত মল্লিক তাঁদেরই একজন। যাঁর উপস্থিতি মানেই পর্দায় এক ভদ্র, মার্জিত, সৎ বাঙালির প্রতিচ্ছবি। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন, কিন্তু কখনো চরিত্র বা জনপ্রিয়তার দোহাই দিয়ে নিজের নীতির সঙ্গে আপস করেননি।
সম্প্রতি তিনি এই ‘ভদ্রলোক’ ইমেজ নিয়ে মুখ খুলেছেন। হাসতে হাসতেই বলেছেন, “আমি পর্দায় এমন কোনো কাজ করিনি, যা আমি আমার পরিবারের সামনে বসে দেখতে পারব না।” কথাটি যতটা সরল, ততটাই গভীর। গ্ল্যামারের এই দুনিয়ায় যেখানে ভাবমূর্তি অনেক সময় তৈরি করা হয় আলো আর ক্যামেরার তলায়, সেখানে রঞ্জিত মল্লিক নিজের বাস্তব সত্তাকেই তুলে ধরেছেন বারবার।
তিনি আরও যোগ করেন, “‘ভদ্রলোক’ ইমেজটা আমার অভিনয় নয়, ওটাই আমার আসল পরিচয়।” তাঁর কণ্ঠে কোনো অহংকার নেই, বরং গর্ব—একজন শিল্পী হিসেবে নিজের প্রতি, নিজের মূল্যবোধের প্রতি।
‘গোত্র’, ‘নাগিন’, ‘অমানুষ’, ‘শত্রু’, ‘চোরাবালি’ কিংবা ‘বেলাশেষে’—প্রতিটি ছবিতেই তিনি ছিলেন বাঙালি পরিবারের পরিচিত মুখ। কখনো কঠোর কিন্তু হৃদয়বান বাবা, কখনো সৎ পুলিশ অফিসার, কখনো প্রতিবাদী মানুষ। প্রতিটি চরিত্রেই তিনি প্রমাণ করেছেন, জনপ্রিয়তা নয়, সম্মানই একজন অভিনেতার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
বিগত কয়েক দশকে বাংলা সিনেমা অনেক বদলেছে, গল্প বদলেছে, দর্শকের রুচি বদলেছে। কিন্তু রঞ্জিত মল্লিক বদলাননি। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, সিনেমা এমনই হওয়া উচিত, যা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখতে পারে। আর সেই বিশ্বাসই তাঁকে আজও করে রেখেছে আলাদা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রিয়।
আরপি/টিকে