যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। অর্থকড়ি ঢেলে ও বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালিয়েও তারা সফল হয়নি।
মামদানি নিউইয়র্কে ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। তবে কোনোভাবেই মামদানিকে না আটকাতে পেরে এখন তার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি তুলছে ট্রাম্পের দল। তারা এখনো সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে তিনি যেন কোনোভাবেই দায়িত্ব নিতে না পারেন।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী মামদানি একজন কমিউনিস্ট, তিনি সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেন এমন সব অভিযোগ আনছে রিপাবলিকান পার্টি। এসবের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও।
এরমধ্যে রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস এবং ফ্লোরিডার প্রতিনিধি র্যান্ডি ফাইন সরাসরি দাবি করেছেন, মামদানি তার নাগরিকত্ব আবেদনের সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা গোপন করেছেন।
ওগলস যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে মামদানির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া তদন্ত করার এবং তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে উগান্ডায় ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।
ওগলস বলেন, “যদি প্রমাণিত হয় মামদানি তার নাগরিকত্বের নথিতে মিথ্যা বলেছেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকার যোগ্য নন এবং নিউ ইয়র্কের মেয়র হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।”
তিনি আরও বলেন, “মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে হলে কমিউনিস্ট বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অবশ্যই জানাতে হয়, যা তিনি জানাননি বলেই সন্দেহ।”
যদিও রিপাবলিকান নেতারা এই ধরনের দাবি করছেন, কিন্তু অলাভজনক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা পলিটিফ্যাক্ট জানিয়েছে, মামদানি তথ্য লুকিয়ে নাগরিকত্ব নিয়েছেন তারা এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পায়নি।
মামদানি ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান।
অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিকত্ব বাতিল করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিরল পদক্ষেপ। কারও নাগরিকত্ব বাাতিলে সরকারকে অকাট্য প্রমাণ দিতে হবে যে আবেদনকারী জেনেশুনে গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, যা তার নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করত।
অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, “মামদানির অযোগ্যতার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমি দেখিনি।”
রিপাবলিকানদের আরেকটি অভিযোগ হলো, মামদানি তার নাগরিকত্বের ফর্মে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা (ডিএসএ) -এর সদস্যপদ গোপন করেছেন, যাকে তারা একটি কমিউনিস্ট সংগঠন বলে দাবি করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএসএ কমিউনিস্ট দল নয়, এটি কমিউনিজমের বিকল্প হিসেবে উঠে আসা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের একটি ধারা। তাই ডিএসএ-র সদস্যপদ নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।
এছাড়া, মামদানির লেখা একটি র্যাপ গানের কথা তুলে ধরে তাকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সমর্থনকারী বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরনের কথা সংরক্ষিত বাক-স্বাধীনতার অংশ, যতক্ষণ না তিনি আসলে কোনো বিদেশী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সরাসরি সাহায্য করছেন।
সূত্র: আলজাজিরা
এসএন