গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর–সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সংস্কার এনেছে। সেবা সহজীকরণ, দুর্ভোগ ও হয়রানি কমানো এবং দুর্নীতি রোধের লক্ষ্যে বিদ্যমান পদ্ধতি পরিবর্তন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর উন্নয়নকৃত ও বরাদ্দকৃত আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর বা দলিল সম্পাদন ও বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল; এবং ঋণ নেওয়ার অনুমতির জন্য লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আর নিতে হবে না।
তবে, প্লট বিভাজন বা একাধিক প্লট একত্র করে আয়তন পরিবর্তন কিংবা ব্যবহার শ্রেণি পরিবর্তনের (যেমন মাস্টার প্ল্যান পরিবর্তন) ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম আগের মতোই বহাল থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা থেকে উন্নয়নকৃত আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সেবা সহজীকরণ, লিজ গ্রহীতাদের দুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘব এবং দুর্নীতি দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রথা ও পদ্ধতি নিম্নরূপে পরিবর্তন করা হলো:
(১) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা থেকে উন্নয়নকৃত ও বরাদ্দকৃত আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, হেবা বা বণ্টন) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেওয়ার বিদ্যমান প্রথা বাতিল করা হলো। এ প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে এ কার্যক্রমের জন্য তফসিলে বর্ণিত আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে লিজ দলিলের অন্যান্য শর্ত যেমন: কোনো প্লটের বিভাজন বা একাধিক প্লটের একত্রীকরণের মাধ্যমে প্লটের আয়তনের পরিবর্তন এবং প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহার শ্রেণির পরিবর্তন অর্থাৎ মাস্টার প্ল্যানের কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকবে।
(২) দলিলগ্রহীতাকে উন্নয়নকৃত ফ্ল্যাট বা ভবনসহ ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ২% হারে এবং শুধু প্লট বা ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৩% হারে অর্থ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন দলিল সম্পাদনকালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুকূলে জমা প্রদান করতে হবে। এছাড়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে উন্নয়নকৃত প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে একই হারে ও পদ্ধতিতে মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) হিসেবে আদায় করা হবে।
(৩) লিজকৃত সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত বিরোধ পরিহার এবং মালিকানা রেকর্ড লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ ও হালনাগাদ রাখার লক্ষ্যে প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল সম্পাদনের পর অবিকল নকলের একটি কপি (সার্টিফাইড কপি) এবং নামজারির পর এ সম্পর্কিত রেকর্ডপত্র ক্রেতা বা, ক্ষেত্রমত, দলিলগ্রহীতা থেকে দলিল সম্পাদনের ৯০ দিনের মধ্যে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করতে ব্যর্থ হলে দৈনিক ৫ টাকা হারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা যাবে। হস্তান্তর দলিল বা নামজারি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে মালিকানা রেকর্ড হালনাগাদ করতে হবে। হালনাগাদকৃত রেকর্ডপত্র রেজিস্ট্রার্ড ডাকের পাশাপাশি ই-মেইল বা ইলেক্ট্রনিক অন্য কোনো মাধ্যমে ক্রেতা বা, ক্ষেত্রমত, দলিল গ্রহীতাকে অবহিত ও প্রেরণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে তা পরিপালনে ব্যর্থ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্তব্য-কর্মে অবহেলার দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৪) লিজ দলিলের মেয়াদ শেষে (নিরানব্বই বছর পর) তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নকৃত বলে গণ্য হবে এবং অনুচ্ছেদ (২) এ বর্ণিত হস্তান্তর ফি আদায়ও রহিত হয়ে যাবে। তবে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের পূর্বানুমতি ব্যতীত প্লটের বিভাজন বা একাধিক প্লটের একত্রীকরণ, প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহার শ্রেণির পরিবর্তনসহ মাস্টার প্ল্যানের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।
(৫) আবাসিক ব্যতীত অন্যান্য (প্রাতিষ্ঠানিক, বাণিজ্য ও শিল্প) প্লট, ফ্ল্যাট বা স্পেসের হস্তান্তর ও নামজারিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে লিজদাতা কর্তৃপক্ষ হতে অনুমোদন নেওয়ার বিদ্যমান প্রথা বহাল থাকবে।
৬) যে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে এবং এ বিরোধে সরকারের স্বার্থের সংশ্লেষ রয়েছে; যে সব প্লট, ফ্ল্যাট বা বাড়ি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে অথচ ২৮/০৩/১৯৮৮ খ্রি. তারিখের পরে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করা হয়নি; এবং যে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট জানুয়ারি ২০০৯ থেকে জুলাই ২০২৪ মেয়াদে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত, সে সব প্লট, ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠান হতে অনুমোদন নেওয়ার বিদ্যমান প্রথা বহাল থাকবে। এ অনুচ্ছেদ এর অধীন লিজদাতা প্রতিষ্ঠান হতে অনুমোদন পাওয়ার পর অনুচ্ছেদ (২) এ বর্ণিত পদ্ধতি ও হারে ক্রেতা বা, ক্ষেত্রমত, দলিল গ্রহীতাকে প্রযোজ্য ফি পরিশোধ করতে হবে।
(৭) এসব বিধানাবলির আলোকে যে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, হেবা বা কটন) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না, সে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের তালিকা এ প্রজ্ঞাপনের অধীন, যথা শীঘ্রই সম্ভব, তফসিল আকারে প্রকাশ করা হবে। তবে প্রকাশিত তফসিলে পরবর্তীতে কোনো ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধনের ক্ষমতা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর পরবর্তী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অনুচ্ছেদ (১) থেকে (৭) এ বর্ণিত সেবা সহজীকরণ পদ্ধতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আরপি/টিকে