জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে বাদ দিয়ে বরং জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতদের দলে সম্পৃক্ত করতে তৎপর বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানকেও পুরোপুরি ধারণ করতে চায় তারা। সেই বিবেচনায় মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধকে একটি আসনে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তাও করছে দলটি।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে এনসিপির পক্ষ থেকে বিএনপিকে ২০ আসন ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তাতে রাজি না হয়ে ৫ আসনে সমঝোতার কথা জানায়। সেখান থেকেই মূলত দুই দলের নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনায় তৈরি হয় দূরত্ব।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গে বিএনপির কোনো নির্বাচনী সমঝোতা হয়নি। আমাদের একটা প্রতিশ্রুতি আছে- ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির যারা শরিক ছিল, তাদের সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা জাতীয় সরকার ও নির্বাচন করা। সেটা আমরা বসেই ঠিক করবো। এ মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, চলতি মাসেই শেষ হবে অবশিষ্ট ৬৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়ন ঘোষণা। যেহেতু এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতার সম্ভাবনা কমে গেছে, তাই পরীক্ষিত মিত্রদের দ্রুত ভোটের মাঠে পাঠাতে চায় দলটি। এছাড়াও ঘোষিত ২৩৭ আসনের কয়েকটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাসও মিলেছে।
সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বলছেন, ক্ষোভ ও অসন্তোষ দমনে বঞ্চিতদের সঙ্গে ফের আলোচনা করবেন শীর্ষ নেতারা। তবুও কেউ জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে সরকারকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে কারও প্রতিবাদ করার অধিকার থাকতেই পারে। এরমধ্যেই ২৩৭ আসনের মধ্যে ৪/৫টি জায়গায় সমস্যা হয়েছে। প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার যে প্যারামিটার তৈরি করা হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন আরেকটা ক্রাইটেরিয়া করতে গেলে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গেও। তিনি বলেন, এটাকে আমরা ফাইনাল সিলেকশন বলছি না। তাই পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। দু-একটা ক্ষেত্রে যদি দলের সিদ্ধান্ত সঠিক না হয়, সেক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা আছে। তবে সেটা খুব বেশি জায়গায় হয়তো দেখা যাবে না।
সম্প্রতি ফেনী সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট মাঠের মতো ‘রিভিউ আবেদন’ করে আলোচনায় আসেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি অভিনব এই প্রতিবাদ করেন। বলেন, 'আমার বাড়ির কাজের ছেলেটা পর্যন্ত জেলে গিয়েছে। আমার অফিসটা পাঁচবার ভেঙেছে। এমনকি সাতবার শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছি। আমার বিশ্বাস দল এটা রিভিউ করবে।'
আলাল উদ্দিনের মতো এমন প্রতিবাদ দেখা যায়নি আর কোথাও। বরং হামলা-বিক্ষোভে গেল কয়েকদিনে উত্তপ্ত ছিল অন্তত ১০টি জেলা।
নেতারা জানান, ঘোষণাহীন ৬৩ আসনের প্রার্থী তালিকা নিয়েও বিএনপির একাধিক দল কাজ করছে। তীব্র অন্তঃকোন্দল থাকা আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলছেন স্বয়ং তারেক রহমান। আর ছোট দলের বড় নেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন লিয়োজোঁ কমিটির নেতারা।
টিকে/