রাজধানীতে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজ সম্মেলনে নারী ও যুবদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ ছয় দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী ও যুব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকা সিএসও হাব এবং সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি। অনুষ্ঠানে নারী ও যুব প্রতিনিধিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. হালিদা হানুম আখতার, আমাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ইশরাত করিম, সাংবাদিক পার্থ সারথি দাস, শিক্ষা গবেষক নাহিদ আক্তার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহানা আক্তার এবং সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কে এম শহীদুজ্জামান। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো. সেকেন্দার আলী মিনা।
ডা. হালিদা হানুম আখতার বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও আমরা নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৫টি সুপারিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ দেয়নি, যা হতাশাজনক। নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করতে হবে-এজন্য ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নিতে হবে।
ইশরাত করিম বলেন, নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। ভিন্নমত প্রকাশ করলেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে, নইলে নারী ও তরুণদের অংশগ্রহণ ব্যাহত হবে।
শিক্ষা গবেষক নাহিদ আক্তার বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্যের শিকড় গভীরে প্রোথিত। শুধু কোটা নয়, যোগ্য নারীদের নেতৃত্বে আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।
সাংবাদিক পার্থ সারথি দাস বলেন, ভুল জনধারণার কারণে সমাজ এগিয়ে যেতে পারছে না। পরিবার থেকে সচেতনতার শিক্ষা দিলে এর ইতিবাচক প্রভাব জাতীয় পর্যায়ে পড়বে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহানা আক্তার বলেন, পরিবার থেকেই নারী ও যুবদের মূল্যায়ন শুরু করতে হবে। সচেতন ভোটারই যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে সক্ষম।
সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কে এম শহীদুজ্জামান বলেন, ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব তখনই সফল হবে, যখন ভোটাররা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সম্মেলনের শুরুতে নারী ও যুব প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আগারগাঁওয়ে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা সিএসও হাবের প্রেসিডেন্ট মুশফিকা লাইজু, এবং অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের ‘সুশীল’ প্রকল্প পরিচালক মৌসুমী বিশ্বাস। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রকল্পের ঢাকা জেলা সমন্বয়কারী নাসরিন মাহমুদ।
ঘোষণাপত্রে ছয়টি অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়-
১. জাতীয় নির্বাচনে নারী ও যুব প্রার্থীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
২. নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ, পরামর্শদান ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৩. নির্বাচনকালীন সহিংসতা, ভয়ভীতি ও হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ।
৪. নির্বাচনী প্রক্রিয়া, দলীয় মনোনয়ন ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৫. গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার ও নির্বাচনী বিষয়ে যুবসমাজকে সচেতন করতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচার অব্যাহত রাখা।
৬. নাগরিক সমাজ, প্রশাসন, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানের শেষ বক্তব্যে ঢাকা সিএসও হাবের জেনারেল সেক্রেটারি মো. আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নারী ও যুবদের অংশগ্রহণ শুধু প্রয়োজন নয়, এটি সময়ের দাবি। নাগরিক সমাজকে এ বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
টিজে/টিএ