মার্কিন সরকারের দীর্ঘতম শাটডাউন শেষ হওয়ার পর বৈশ্বিক অর্থবাজারে নতুন গতি এসেছে। ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে- এই আশঙ্কা ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সম্ভাব্য সুদহার কমানোর প্রত্যাশায় বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত স্পট গোল্ডের দাম ০.৯ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪,২৩৫.৫৬ ডলার হয়েছে, যা ২১ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। ডিসেম্বর সরবরাহযোগ্য মার্কিন স্বর্ণ ফিউচারও ০.৬ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪,২৪০.১০ ডলারে লেনদেন হয়।
মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী হুগো প্যাসকাল বলেন, শেয়ারবাজারের পাশাপাশি মূল্যবান ধাতুর বাজারও শক্তিশালী হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা ফেডের নরম নীতির প্রত্যাশায় আগাম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। সরকার পুনরায় চালু হলেও ঋণের পরিমাণ বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, স্বর্ণ ও রুপার প্রকৃত চাহিদা এখনো শক্তিশালী রয়েছে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো প্রবৃদ্ধি দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা ধাতুর দামের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার একটি বিল স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম—৪৩ দিনব্যাপী—সরকারি অচলাবস্থা (শাটডাউন) শেষ করেছেন। এই সময়ে চাকরি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বিলম্বিত হয়।
চুক্তির ফলে সরকার ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থায়ন পাবে। তবে প্রতিবছর প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ঋণের পরিমাণ ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, চলতি বছরে আর সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কম, মূলত পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক তথ্যের অভাবে। তবে গত মাসে ফেড এক চতুর্থাংশ শতাংশ (০.২৫ পয়েন্ট) সুদহার কমিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ডিসেম্বরের নীতি সভার আগে শ্রম দপ্তরকে নভেম্বর মাসের কর্মসংস্থান ও মুদ্রাস্ফীতির তথ্য প্রকাশে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে ফেড কর্মকর্তারা সর্বশেষ অর্থনৈতিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ আশা করছেন ফেড আগামী মাসে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত সুদহার কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে, কারণ এতে কোনো সুদ না থাকলেও এটি অনিশ্চয়তার সময়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এ বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। গত ২০ অক্টোবর এটি রেকর্ড আউন্সপ্রতি ৪,৩৮১.২১ ডলার-এ পৌঁছেছিল। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, ইটিএফ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ফেডের সম্ভাব্য নীতিনরমতার প্রত্যাশাই মূলত এই উত্থানের কারণ বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
অন্যদিকে, রুপার দাম বেড়ে ১.২ শতাংশে আউন্সপ্রতি ৫৪.০৫ ডলার, যা ১৭ অক্টোবরের রেকর্ডের কাছাকাছি। প্লাটিনাম স্থিতিশীল রয়েছে আউন্সপ্রতি ১,৬১৫ ডলারে, আর প্যালাডিয়ামের দাম বেড়ে ০.৮ শতাংশে আউন্সপ্রতি ১,৪৮৫.২৬ ডলার হয়েছে।
এদিকে দেশের বাজারে নতুন করে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। এবার ভরিতে ৫ হাজার ২৪৮ টাকা বেড় প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
টিএম/টিএ