অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আর কিছু পাওয়া যাবে না : রাজ্জাকী

এই সরকারের (ইউনূস সরকার) কাছ থেকে আর কিছু পাবেন না। আমরা এখন পর্যন্ত যা দেখছি, সেখান থেকে বলছি। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিশ্লেষক আবু হেনা রাজ্জাকী সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, সরকার নির্বিকার।

সাত মাস ধরে রাজনৈতিক দল বসল, সরকারও বসল; কিন্তু সবাই মিলে ব্যর্থ। সবাই মিলে ব্যর্থ হলে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবও ব্যর্থ। কমপ্লিট ফুল স্টপ, আমি বলে দিচ্ছি। কারণ এত দিন পরে আপনি ওনার কাছ থেকে কিছু পাবেন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।

এটা আমি অনেক টক শোতে বলেছি। এতটুকু যদি মেনে নিতে পারেন, তাহলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে সুযোগ দেন, না হলে তাকে সরিয়ে দেন।

রাজ্জাকী আরো বলেন, তার (ইউনূস) কোনো ঢাল, তলোয়ার কিচ্ছু নেই। আমরা তো দেখতেছি, কিচ্ছু নেই।

এখন ইউনূস সাহেব ফুল স্টপ। এইবার আসেন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে, তারাও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ সাত মাসে পারেনি। ওদিকে তাদের প্রতারণার অপবাদও তারা (সরকার) নিয়েছে। আমি এটা অনেক জায়গায় বলেছি, এখনো বলছি প্রতারক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাওয়া, নির্বাচনের দিন তারা যে প্রতারণা করবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

তারপরও আমরা নির্বাচন চাচ্ছি।

নির্বাচনের দিন প্রতারণা হবে কিভাবে প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাকী বলেন, ওই যেহেতু বলছে, তাদের নোট অব ডিসেন্টগুলোকে উইথড্র করে তারা দেখিয়েছে, কোনো নোট অব ডিসেন্ট নেই।

ওখানে স্বাক্ষর হয়েছে, যেটা বিএনপি বলছে। তাহলে তো প্রতারণা করা হয়েছে। সুতরাং যে সরকার একটা দলের সঙ্গে প্রতারণা করে, সেই দল ওই সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে ওই দিন যে প্রতারণা হবে না, তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। সেই অর্থে আমি বলছি। সুতরাং ওই হিসাব করলে এই সরকার ফুল স্টপ, অথর্ব সরকার। তার অধীনে নির্বাচন চাওয়া কারো অধিকার নেই, মানে নির্বাচন চাওয়াই উচিত না।

নির্বাচন না চাইলে তাহলে কি এইভাবেই চলতে থাকবে? এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাকী বলেন, না আমি তা বলছি না। আমি বলছি, আমি তো নির্বাচনের পক্ষে; কিন্তু এই যে দাবি-দাওয়া সবই তো রয়ে গেছে। আপনি তো ক্লিন করতে পারেননি। আপনি নির্বাচনে যাবেন কিভাবে? আপনি বলে দিন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। কে বলবে? আমরা বলছি, রাজনৈতিক দলগুলো বলুক।

কিন্তু তারা তো বলছে, সরকার প্রতারক। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো নাই, কারণ সরকার প্রতারক এটা এস্টাবলিশ হয়েছে।

এরপর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বলেন, সব রাজনৈতিক দলই বলছে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তখন রাজ্জাকী বলেন, সব রাজনৈতিক দল যদি বলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, তাহলে আপনি নির্বাচন চান কিভাবে? নির্বাচনের পূর্বশর্ত কী? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগবে না? আপনি আন্দোলন করেন না কেন? যারা করছে, তাদেরকে আপনি বাধা দিবেন কি হিসেবে?

রাজ্জাকী আরো বলেন, সবশেষে আমি বলব, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল এবং ক্ষমতাধর কিছু স্টেকহোল্ডার আছে। এইরকম সিচুয়েশনে এই ক্ষমতাধর স্টেক হোল্ডার খুঁজি। এখন যদি বলেন ক্ষমতা আর্মি, তাহলে তাকে দরকার আছে। কারণ এরকম ক্রাইসিস টাইমে সবই তো আর্মিরা গিয়ে করে। দরকার থাকলে সেই স্টেক হোল্ডাররা মিলে একটা জায়গায় যাবে, সেখানে গিয়ে আপনাকে সব এনসিওর করতে হবে।

তিনি বলেন, আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেওয়ার পরও তার (ড.ইউনূস) বিরুদ্ধে যখন এতো কথা হচ্ছে, তার মানে কি? নির্বাচনে কিন্তু দুইটা খেলা হচ্ছে। একটা খেলা হলো, এই নির্বাচন হলে ইউনূস সাহেবের চলে যেতে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়া। এখন ইউনূস সাহেবের অপসারণ কে কে চায়, সেটা হলো পতিত সরকারের শক্তি। সেই শক্তি কিন্তু ইউনূস সরকারের অপসারণ চায়। কারণ তাদের সরানোর পরেই ইউনূস সাহেব বসেছেন। আর নির্বাচন করলে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা নির্বাচন হলেই ক্ষমতায় যাবে। সুতরাং ইউনূস সাহেবের অপসারণ অটো হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই আওয়ামী লীগের লকডাউন এবং ওই পতিত শক্তি, তারা ইউনূস সাহেবকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেনে নিতে পারছে কি না? যদি ইউনুস সাহেবের অবস্থান ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই পতিত সরকার বা পতিত শক্তিটা মেনে নিতে পারে, তাইলে হয়তো নির্বাচনটা হলেও হতে পারে। আর যদি ওই পতিত শক্তিটা ইউনুস সাহেবের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকাটা অপছন্দ করে, তাহলে এই যে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, ককটেল ফুটছে তার মাত্রা বাড়লে বাড়তেও পারে।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভোলার ভেদুরিয়া সার কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা Nov 14, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির মেয়াদ বাড়ছে আরও ৫ বছর Nov 14, 2025
img
ম্যাচটা অবশ্যই জেতা উচিত ছিল: হামজা চৌধুরী Nov 14, 2025
img
গাজীপুরে বিএনপিতে যোগ দিলেন ৮ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক সদস্য Nov 14, 2025
img
পুলিশ হেফাজতে ২ চীনা নাগরিক Nov 14, 2025
img
ক্রিকেটপাড়ায় তোলপাড় : স্মৃতি মান্ধানার ‘বিয়ের কার্ড’ ভাইরাল Nov 14, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মাধ্যমে সংকট কেটে গেছে : নুরুল হক নুর Nov 14, 2025
img
যুবসমাজ মাতাতে গ্লোবট্রটর মঞ্চে আশিষ Nov 14, 2025
img
ফের জল্পনায় বলিউড ও আইপিএলের অনিরুদ্ধ-কাব্য জুটি! Nov 14, 2025
img
রাজধানীজুড়ে বাড়তি সতর্কতা, মাঠে ১২ প্লাটুন বিজিবি Nov 14, 2025
img
লকডাউন-অগ্নিসংযোগে নির্বাচন বিরোধী মহলেরও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে : হাবিব Nov 14, 2025
দিল্লি যাচ্ছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান Nov 14, 2025
img
কেন পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারছেন না ট্রাম্প? Nov 14, 2025
img
চট্টগ্রামে জোড়া খুন তুচ্ছ ঘটনায় এনায়েত বাজারে প্রাণ গেলো ব্যবসায়ির Nov 14, 2025
img
পুসকাস পুরস্কারের দৌড়ে উঠলেন ইয়ামাল, ফের মনোনীত মার্তা Nov 14, 2025
ঘাতক লিমন আটক, ৫ বছরের সম্পর্কের দাবি Nov 14, 2025
রাজশাহীতে বিএনপির নারী কর্মীকে মারধরের অভিযোগ জামায়াত কর্মীর বিরুদ্ধে Nov 14, 2025
img
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিচারকের ছেলের মৃত্যু, জানালেন চিকিৎসক Nov 14, 2025
img
রংপুরের নতুন ডিসি এনামুল আহসান Nov 14, 2025
img
তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রিত্ব দেখতে মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে : মো. আবুল কালাম Nov 14, 2025