মোস্তফা ফিরোজ

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে ইউনূসের ওপর ব্রিটেন-ভারতের চাপ বাড়ছে

সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ এক মন্ত্রীকে সরাসরি জানিয়েছেন—আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, কারণ তাদের কোনো নিবন্ধন নেই এবং দলের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ। তিনি বলেছেন, ‘ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বিষয়টি অবশ্যই নোট করবেন; তবে তার মানে এই নয় যে তারা ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।’

শনিবার (১৫ নভেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে তিনি এসব কথা বলেন।

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘জাতিসংঘের রিপোর্টে জুলাই আন্দোলনে ১,৪০০ জন নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে সেখানে অপরাধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে আলাদা করে দেখা হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নামে বিচার নয়, অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারই গ্রহণযোগ্য। একটি রাজনৈতিক দলকে অপরাধী ঘোষণা করা মানে তার রাজনৈতিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, যা জাতিসংঘ সমর্থন করে না।’

মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, “ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে দিল্লি যাচ্ছেন খলিলুর রহমান। ভারতের উদ্বেগ, বাংলাদেশে নির্বাচন না হলে দেশ অস্থিতিশীল হবে, আর সেই অস্থিরতার সুযোগ নেবে পাকিস্তান বা চীন। উত্তর-পূর্বের ‘চিকেন নেক’ ঘিরে ভারতের তিনটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন এই উদ্বেগেরই সামরিক প্রতিফলন।”
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা–বাণিজ্য সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

এতে ভারত ড. ইউনূসের ওপরও ক্ষুব্ধ। তবে তাদের ধারণা, বিএনপি বা জামায়াতও ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে কঠোর অবস্থানে যাবে না; বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মতো আচরণও করবে না। ভারতের মতে, বর্তমান অনিশ্চয়তার তুলনায় যেকোনো নির্বাচিত সরকারই বেশি স্থিতিশীল অংশীদার।’

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘ভারত একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও খোলা রাখতে চায়। তাদের কাছে যে রিপোর্ট গেছে, সেখানে বলা হয়েছে—আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাই শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিকভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং ভারতও সক্রিয় রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ড. ইউনূস শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নন, তিনি নোবেলজয়ী। এই পরিচয় তাকে বিশ্বনেতাদের কাছে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়। তার অবস্থান ও উদ্যোগে যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সামনে আসে এবং তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এতে ব্রিটিশ সরকার ও লেবার পার্টি বড় ধাক্কা খায়, যার পেছনে ইউনূস সরকারের ভূমিকাই প্রধান। এ কারণে ধারণা তৈরি হয়েছে—ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউনূসের প্রতি আগের সমর্থন থেকে দূরে সরে গেছেন। আগে যেসব ব্রিটিশ কূটনীতিক বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিতেন, তারা এখন নীরব। কারণ যুক্তরাজ্যের চাপ পশ্চিমা বিশ্বকে একই পথে ঠেলে দিতে পারে।’

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, বিষয়টি সরল নয়। নির্বাচন তফসিলের আগে-পরে পশ্চিমাদের অবস্থান পরিষ্কার হবে। যদি ‘বিচারাধীন’ হওয়ার যুক্তিতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়—পশ্চিমাদের সামনে এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এখন বৈশ্বিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমা দেশগুলো সম্পর্ক রাখে সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে, যেখানে জবাবদিহি ও গণতন্ত্র রয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘যেসব দেশে সরকার ও জবাবদিহি অনুপস্থিত—পশ্চিমারা সাধারণত সেই দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে না। বাংলাদেশকে এগোতে হলে পশ্চিমাদের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক প্রয়োজন। আর ড. ইউনূসের গণতান্ত্রিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধরে রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে ঘিরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিচার করতে বাধা নেই, মৃত্যুদণ্ড হলেও আইনি প্রক্রিয়ায় হতে পারে। কিন্তু একটি দলকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা তা ভিন্ন প্রশ্ন। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, এখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ পার্টিতে পরিণত করা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা বড় প্রশ্ন।’

মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হলে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে সংকট রয়ে গেছে। আর সে কারণেই এর একটি রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে হবে।’

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মসজিদে যাওয়া নিয়ে উত্তেজিত সোনাক্ষী, মন্তব্য জহিরের Nov 15, 2025
img

বিবিসি বাংলা

আলোচনায় ‘রাতের ডিসি’, কোন যোগ্যতায় নিয়োগ পাচ্ছেন! Nov 15, 2025
img
বরিশালে বাসভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে শ্রমিক-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, ভাঙচুর অন্তত ১০টি বাস Nov 15, 2025
img
পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া অধিকার, ভারতের কোনো দয়া নয় : মির্জা ফখরুল Nov 15, 2025
img
শেষ মুহূর্তের গোল আটকাতে ফোকাস ও কৌশল বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ Nov 15, 2025
img
আমি জিতলেই জিতবে বাংলাদেশ : মিথিলা Nov 15, 2025
img
প্রীতি ম্যাচে রাতে সেনেগালের বিপক্ষে মাঠে নামছে ব্রাজিল Nov 15, 2025
img
ভারতের কোনো দালালকে ভোট দেবেন না: মাহমুদুর রহমান Nov 15, 2025
img
কলকাতায় আ.লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ট্রেনিং দিচ্ছে : হাফিজ উদ্দিন Nov 15, 2025
img
নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে দুর্নীতি কমানো মুশকিল হবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 15, 2025
img
নেত্রকোনায় পুকুরে ডুবে প্রাণ গেল ২ জনের Nov 15, 2025
img
হাতিরঝিলে ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন মোটরসাইকেলে Nov 15, 2025
img
প্রকাশ পেল আইপিএল দলগুলোর নিলামের বাজেট Nov 15, 2025
img
জাপাকে হাত-পা বেঁধে সাঁতার প্রতিযোগিতায় নামাতে চায় সরকার : জি এম কাদের Nov 15, 2025
img
মানুষকে ভালোবাসা কঠিন নয়, ছড়িয়ে দিলেই বাড়ে: কোয়েল মল্লিক Nov 15, 2025
img
ঢাবি হঠাৎ উত্তাল, ১৫ মিনিটের আলটিমেটাম উপাচার্যকে Nov 15, 2025
img
শেবাগের এক যুগের টেস্ট ক্যারিয়ার রেকর্ড ভেঙে দিলেন রিশভ পন্ত Nov 15, 2025
img
বাগেরহাট কারাগারে প্রাণ গেল ভারতীয় জেলের Nov 15, 2025
img
সুস্থ হয়েছেন ধর্মেন্দ্র, চলছে জন্মদিন উদযাপনের পরিকল্পনা Nov 15, 2025
img
হত্যার পর ২৬ খণ্ড : গ্রেপ্তার জরেজ-শামীমা রিমান্ডে Nov 15, 2025