প্রশ্ন মাসুদ কামালের

মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ছাড়া নতুন ডিসিরা ভালো করতে পারবেন?

সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের (জেলা প্রশাসক) অনেকের মাঠ পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নাই। এদের মধ্যে অনেকে নতুন ডিসি হয়েছেন, তাদের এর আগে কোনো ধরনের এক্সপেরিয়েন্স নাই। তাহলে তারা এখানে এসে কী করবেন? তারা কি ভালো করতে পারবেন? নির্বাচনি কাজ একটু জটিল কাজ। লোকজনকে চিনতে হয়, একটা এলাকার কে কেমন লোক জানতে হয়, কে মাস্তান, কে গিরিঙ্গি বুঝতে হয়।

সেটা বোঝার জন্য একটা ধারণা থাকা লাগে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হয়।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

ভিডিওর শুরুতে মাসুদ কামাল বলেন, নির্বাচন নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও যেন মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেই প্রস্তুতির একটা অংশ হিসেবে তারা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিসি পদে নতুন নতুন লোককে নিয়োগ করতেছে। এ পর্যন্ত যতদূর জানি, তিন দফায় ৫২ জেলায় তারা নতুন ডিসি নিয়োগ করেছে। এই পদটা নির্বাচনের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এদেরকে বলা হয়ে থাকে রিটার্নিং অফিসার, মানে একটি জেলায় যতগুলো নির্বাচন হবে, যতগুলো উপজেলায় অথবা আসনে নির্বাচন হবে- সেই নির্বাচনের ফলগুলো রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা করবে। এমনকি অনেকে এমনও বলে থাকেন যে তাদের উপরে নির্ভর করে যে নির্বাচনটা কেমন হচ্ছে বা কেমন না হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন নিয়োগ হয়েছে। আগে যারা ছিল সবাইকে পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে কারা ছিল? এই গত এক দেড় বছরে কারা ছিল? আওয়ামী লীগ আমলে যারা ছিল, তারা কি কেউ ছিল? না, তারা কেউ ছিল না। আওয়ামী লীগ আমলের ডিসি সবগুলোকে পরিবর্তন করা হয়েছিল। গত এক বছর নতুন ডিসি ছিল এবং তাদেরকে আরেক দফা চেঞ্জ করা হলো। একদম ফ্রেশ নতুন লোক নিয়োগ করা হলো। যার না কি ওই জেলা সম্পর্কে কোনো ধারণাও নাই। এমন লোককে দেওয়া হলো। কী উদ্দেশ্যে, কী পলিসি? নিশ্চয় একটা পলিসি এখানে আছে। নিশ্চয় একটা লক্ষ্য আছে। নীতি আছে।

এ সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, প্রথম নিয়োগ করা হলো ৮ নভেম্বর শনিবার। সেদিন ১৫টি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হয়। ৯ নভেম্বর ১৪ জেলায় নতুন ডিসি দেওয়া হয়। ৯ নভেম্বরের নিয়োগটা ছিল বড় অদ্ভুত। কারণে এ নিয়োগটা দেওয়া হয় গভীর রাতে। গভীর রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গভীর রাতে কেন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়? এ এক রহস্য। কেন? আগের দিন কি দিনের বেলা অফিস খোলা ছিল না? অথবা রাতটা শেষ হলে সকালে কি অফিস খোলা থাকবে না? এটা কেন? এটা কিন্তু ক্লিয়ার না। কারণ ৯ নভেম্বর এমন তো না যে পরের দিন শুক্রবার ছিল। ৯ নভেম্বর ছিল রবিবার। রবিবারের পরের দিন সোমবার আসত।

সমস্যাটা কি আছে? কেন গভীর রাতে করতে হলো, এটা কেউ জানে না। নিশ্চয় এর মধ্যে কোনো কারণ আছে, লেনদেনের ঘটনা আছে কি না বলতে পারব না। তবে এই ৯ নভেম্বরে যে ডিসিগুলো নিয়োগ করা হয়, এদেরকে নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘রাতের ডিসি’ নামে পরিচিত হয়ে গেছে। তাদের রাতের বেলা নিয়োগ করা হয়েছিল। অদ্ভুত একটা নিয়ম। তারপরে ৪ দিন গ্যাপ দিয়ে ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুইটি আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন দিয়ে মোট ২৩ জন ডিসি নিয়োগ করা হয়। প্রথমে ১৫, তারপরে ১৪, তারপরে ২৩। এই সবমিলিয়ে ৫২ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হয়ে গেছে। তার আর বেশি একটা বাকি নেই। আর আট নয়টা জেলা বাকি আছে।

এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, এখন এই ৫২ জেলায় কাদেরকে ডিসি নিয়োগ করা হলো? আমি নিজে কিছুটা ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখেছি, এখানে অনেক লোক আছেন, যারা না কি বেসিক্যালি কখনোই মাঠ প্রশাসনে কাজ করেননি। এটা কীভাবে সম্ভব? সাধারণত ডিসি হন কারা? ডেপুটি সেক্রেটারি পদের লোকরা ডিসি হন। বিশেষ ক্ষেত্রে, জয়েন্ট সেক্রেটারি হন। তো মাঠ পর্যায়ে কাজ না করে ডেপুটি সেক্রেটারি হলো কী করে? হয়েছে একটি কারণে। সেটা হলো- এবার এই অর্থনৈতিক ক্যাডার যেটা আছে এই ক্যাডারটাকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে। এই যে একীভূত করা হয়েছে, করার কারণে তারা এখন প্রশাসন ক্যাডারের লোক হয়ে গেছে। এই অর্থনৈতিক ক্যাডারের লোকেরা কিন্তু কখনো মাঠ প্রশাসনে বা এর আগে কোনো নির্বাচনি কাজ করেনি। এদের ম্যাক্সিমাম, দুয়েকজন ব্যতিক্রম থাকলেও থাকতে পারে। এরা যেহেতু একীভূত হওয়ার পরে প্রশাসন ক্যাডার হয়ে গেছে, এদেরকে বেশি বেশি নিয়োগ করা হয়েছে। কেন?

তিনি আরো বলেন, ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ এই তিনটা নির্বাচন, যে তিনটা নির্বাচন খুবই ফল্টি ছিল বলে আমরা সবাই জানি। ২০১৪-তে তো অর্ধেক আসনে নির্বাচনই হয়নি। ২০১৮-তে রাতে ভোট হয়ে গিয়েছিল এবং ২০২৪-এ আমি আর ডামি নির্বাচন হয়েছে। এই তিন নির্বাচনে যারা ডিসি হিসেবে কাজ করেছে এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে এবং নির্বাচনি কাজে যারা জড়িত ছিল- এদের কাউকে এবার নির্বাচনি কাজে জড়িত রাখা হবে না বলে সরকার একটা নিয়ম করেছিল। শুনতে ভালো শোনা যায়। তা-ই তো, এরা খারাপ নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এদেরকে রাখব না। এদের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন বাদ দিলে পরে লোক তো কমে যাচ্ছে। তখন প্রশাসন অপারেশন ক্যাডার সঙ্গে একীভূত হয় যে অর্থনৈতিক ক্যাডার সেখান থেকে লোকজনকে নেওয়া হয়েছে। প্রবলেমটা হয়েছে কি, এদের তো মাঠ পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নাই। এদের মধ্যে অনেকে নতুন ডিসি হয়েছেন, তাদের এর আগে কোনো ধরনের এক্সপেরিয়েন্স নাই। তাহলে তারা এখানে এসে কি করবেন? তারা কি ভালো করতে পারবেন? নির্বাচনি কাজ একটু জটিল কাজ।

লোকজনকে চিনতে হয়, একটা এলাকার কে কেমন লোক জানতে হয়, কে মাস্তান, কে গিরিঙ্গি বুঝতে হয়। সেটা বোঝার জন্য একটা ধারণা থাকা লাগে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হয়। প্রশাসন ক্যাডারে সাধারণত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকে অথবা এসিল্যান্ড হয়। অনেকে ম্যাজিস্ট্রেট এখানে। কিন্তু এভাবে ধীরে ধীরে তারা উপরের দিকে উঠে। তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করার একটি অভিজ্ঞতা আছে। এখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নাই তেমন লোককে যদি ডিসি বানিয়ে দেন, উনি গিয়ে কী করবেন? নিজে একটা ঝামেলায় পড়ে যাবেন। থতোমতো খেয়ে যাবেন। বুঝতে পারবেন না। হয়ত অন্য লোকের সাহায্য নেবেন। যার সাহায্য নেবেন, সেই লোকটা যদি সৎ না হয়, তাহলে কিন্তু একটা ডিজাস্টার হয়ে যাবে।


ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি যা অঙ্গীকার করে তা বাস্তবায়ন করে : খোকন Nov 16, 2025
img
আগামী নির্বাচনই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কাজ করবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 16, 2025
img
ভোটে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শক্তি আ. লীগের নেই : প্রেস সচিব Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার প্লট দুর্নীতির ১ মামলার শুনানি আজ Nov 16, 2025
img
সংবিধান সংশোধন নিয়ে পাকিস্তানে অস্থিরতা, পদত্যাগ আরেক বিচারপতির Nov 16, 2025
img
কাতারে কঙ্গো সরকারের সঙ্গে কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্স একটি নতুন শান্তিচুক্তি সই Nov 16, 2025
img
তারেক রহমানের ৩১ দফাই রাষ্ট্র গঠনে সর্বজনীন দিকনির্দেশনা: মনিরুল হক চৌধুরী Nov 16, 2025
img
জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দরকষাকষির বিষয় নয়, টিকে থাকার প্রশ্ন : ফরিদা আখতার Nov 16, 2025
img
লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবি, প্রাণ হারালেন ৪ বাংলাদেশি Nov 16, 2025
img
বিচারকদের কলমবিরতি পালন কর্মসূচি প্রত্যাহার Nov 16, 2025
img
চাঁদাবাজির সময় ইউপি সদস্যসহ আটক ১০ Nov 16, 2025
img
বেহেশতের কথা বলে ভোট চাওয়া দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে: আমান উল্লাহ Nov 16, 2025
img
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় সাবেক ভিসিসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আজ ১৪তম দিনের সাক্ষ্য Nov 16, 2025
img
গাড়ি থেকে লোহার রড ছুটে এসেছিল বিবেকের দিকে Nov 16, 2025
img
রাজধানীতে সকালের তাপমাত্রা ১৯.৪ ডিগ্রি, আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা Nov 16, 2025
img
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার Nov 16, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনকে অর্থবহ করতে আগে গণভোট প্রয়োজন: ড. হেলাল উদ্দিন Nov 16, 2025
img
ভারতে উচ্ছেদ অভিযানে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালো বিএসএফ Nov 16, 2025
img
আজও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’, দূষণে শীর্ষে দিল্লি Nov 16, 2025
img
জর্জিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে স্পেন Nov 16, 2025