আবীরের যদি প্রথম নায়িকা হতে পারতেন? অনুরাধা মৃদু হেসে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, “ছবিতে নায়কের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর যা বর্ণনা, তাতে ‘দ্বিতীয়’ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।” বাস্তবে কারও ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ হবেন? উত্তর দিতে তিনি একটু সময় নিয়েছেন। তার পর বলেছেন, “সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। তবে অবশ্যই প্রথম স্ত্রী হওয়ার কথাই মাথায় আসবে প্রথমে।” সম্পর্কের এই বিশেষ দিক নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, “সাধারণত, মেয়ের বাড়ি অনেক উদারমনস্ক। তাঁরা ডিভোর্সি পুরুষকে পাত্র হিসাবে মেনে নেন। এমনকি সন্তান থাকলেও।” অনুরাধা দেখেছেন, একই ঘটনা একটি মেয়ের সঙ্গে ঘটলে, সেটা হয় না। বিবাহবিচ্ছিন্ন নারীকে অত সহজে মেনে নেওয়া হয় না। সন্তান থাকলে তো কথাই নেই। দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে কথাপ্রসঙ্গে তাঁর আফসোস, “বিবাহবিচ্ছিন্ন নারীর দ্বিতীয় বিয়ে সুখের— খুব কম দেখা গিয়েছে। বলতে পারেন হাতেগোনা।”
২১ নভেম্বর ‘ডিপ ফ্রিজ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। ইতিমধ্যেই ছবি ঘিরে দর্শকের আগ্রহ জন্মেছে। কারণ, ছবিটি জাতীয় সম্মানে সম্মানিত। এই সম্মান অনুরাধার পেশাজীবনকে কতটা এগিয়ে দেবে? প্রশ্ন শুনে ক্ষণিকের দ্বিধা তাঁর কণ্ঠে। নায়িকা তার পরেই সপাট, “দেখুন, দক্ষিণে অভিনয় করলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতাম, হ্যাঁ আমার উপকার হবে। কিন্তু আমি কাজ করি কলকাতায়।” প্রশ্ন তুলেছেন, “বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় জাতীয় সম্মান কি পেশাক্ষেত্রে আলাদা কোনও মাত্রা আদৌ যোগ করে? আমার অন্তত মনে হয় না।” ফলে, এ বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসীও নন।
ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে। এমনিতেই টলিউড নায়িকাদের কাছে আবীরের আবেদন মারাত্মক। পর্দায় তাঁকে নায়ক হিসাবে বারবার পেতে মুখিয়ে থাকেন তাঁরা। এমন একজনের সঙ্গে অনুরাধার ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের অনুঘটক কি আবীরের গালের কাটা দাগ?
শুনে জোরে হেসে ফেলেছেন তিনি। অনুরাধার কথায়, “এত ভাল, ভদ্র, মাটিতে পা দিয়ে চলা এক মানুষ। তার উপরে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর রসবোধ। কোনও পুরুষের মধ্যে এত কিছু থাকলে এমনিতেই তিনি মেয়েদের পছন্দের তালিকায় উঠে আসেন। আবীরদা সে রকমই। ফলে, গালের কাটা দাগ দেখার প্রয়োজন পড়েনি!” রসিকতার পরেই অল্প গম্ভীর ছবির দ্বিতীয় নায়িকা। জানালেন, টলিউডের প্রথম সারির নায়কের বিপরীতে কাজের সুযোগ এই প্রথম। ফলে, শুরু থেকেই ভাললাগায় বুঁদ হয়ে ছিলেন। বাকিটা সামলে নিয়েছেন নায়ক নিজেই।
অনুরাধা বড়পর্দার অন্য ধারার অভিনেত্রী। তাঁকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রাশিস আচার্য বানান ‘নীহারিকা’। শিলাদিত্য মৌলিক ‘সোয়েটার’ ছবিতে তাঁকে ডেকেছিলেন। এর আগে অর্জুনের ‘গুলদস্তা’ ছবিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। তিনি কি বাণিজ্যিক ধারার ছবির জন্য নন? জবাব দিতে গিয়ে অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের উদ্ধৃতি ধার করেছেন। বলেছেন, “কিছু দিন আগে কোয়েলদি এক সাক্ষাৎকারে ভারী সুন্দর কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন, আলিয়া ভট্ট যদি ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর পাশাপাশি ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কহানি’তে অভিনয় করতে পারেন, তা হলে বাঙালি অভিনেত্রীরা সব ধারার ছবিতে নেই কেন? একই কথা বোধহয় আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।”
তাঁকে কোন ধারার ছবিতে দেখা যাবে, সেটা পরিচালক বা প্রযোজকের ভাবনা। তাঁর নয়। সেই জায়গা থেকেই তাঁর মত, তিনি সব ধারার ছবিতে অভিনয়ে স্বচ্ছন্দ। প্রয়োজনে ‘মশালা’ ছবিতে গাছের ডাল ধরে গাইতেও পারবেন। তবে এই ধরনের ছবি আর হয় না। দর্শকেরাই আর দেখতে চান না। তিনিও তাই তথাকথিত ‘নায়িকা’র বদলে ‘অভিনেত্রী’র তকমা পেতে পছন্দ করেন।
ইএ/টিকে