দারুণ শুরুর পর ব্যাটিং ধসে দেড়শর নিচে আটকে গেল জিম্বাবুয়ে। বোলিংয়ে বেশ লড়াই করল তারা। কিন্তু শেষ দিকে তালগোল পাকিয়ে হেরে গেল দলটি। ফাখার জামান আর উসমান খানের কার্যকর ইনিংস ও মোহাম্মদ নাওয়াজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে শুভসূচনা করল পাকিস্তান।
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৫ উইকেটে। রাওয়ালপিন্ডিতে মঙ্গলবার ৪৮ বলে ৭২ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও জিম্বাবুয়ে ৮ উইকেটে করতে পারে ১৪৭ রান। মাঝে ৩৭ রানের মধ্যে তারা হারায় ৭ উইকেট।
ওপেনার ব্রায়ান বেনেটের ৩৬ বলে ৪৯ রানের পর পাঁচ নম্বরে নেমে ত্রিশোর্ধ ক্যামিও ইনিংস খেলেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিল ঠিক উল্টো। প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারে কেবল ৫৬ রান। পরে দ্রুত রান তুলে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা চার বল বাকি থাকতে।
পঞ্চম উইকেটে ফাখার ও উসমানের ৩৯ বলে ৬১ রানের জুটি বদলে দেয় ম্যাচের চিত্র। ষষ্ঠ উইকেটে উসমান ও নাওয়াজের ২১ বলে ৩৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।
শেষ দুই ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। ১৯তম ওভারে নাওয়াজের ক্যাচ ফেলেন বেনেট। পরের ডেলিভারিতে ‘নো’ বল করেন বোলার ব্র্যাড ইভান্স। পরের বলে ফিল্ডারের বাজে ফিল্ডিংয়ে হয়ে যায় বাউন্ডারি।
শেষ ওভারে ৫ রানের সমীকরণে প্রথম দুই বলে চার মেরে ম্যাচের ইতি টেনে দেন নাওয়াজ। চার ওভারে ২২ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ১২ বলে অপরাজিত ২১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতিও পান এই বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার।
টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা ফাখার ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ বলে করেন ৪৪ রান। ৩ চারে ২৮ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন উসমান। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। ম্যাচের প্রথম বলে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে চার মেরে শুরু করেন বেনেট। তৃতীয় বলে তিনি চার মারেন আরেকটি।
সাইম আইয়ুবকে ম্যাচের প্রথম ছক্কায় ওড়ান টাডিওয়ানাশে মারুমানি। পাওয়ার প্লেতে জিম্বাবুয়ে করে বিনা উইকেটে ৫৯। অষ্টম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসে মারুমানিকে ফিরিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন নাওয়াজ। তিনে নেমে ব্রেন্ডান টেইলর রান আউটে কাটা পড়েন ১৪ বলে ১৪ রান করে।
ফিফটির দুয়ারে গিয়ে সাইমকে ফিরতি ক্যাচ দেন বেনেট। এক প্রান্তে চলতেই থাকে আসা-যাওয়ার মিছিল। একাদশ ওভারে ১ উইকেটে ৯১ রানের শক্ত অবস্থানে থেকে জিম্বাবুয়ের স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১২৮। দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যান মূলত রাজা। ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৪ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
রান তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা ছিল ভীষণ মন্থর। পঞ্চম ওভারে সাহিবজাদা ফারহান ও বাবর আজমকে ফেরান ইভান্স। শূন্য রানে ফেরেন বাবর।অধিনায়ক সালমান আলি আগা টিকতে পারেন দুই বল। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান করতে পারে কেবল ৩১ রান।
একটি করে চার ও ছক্কায় ২৬ রান করে সাইম দশম ওভারে বিদায় নিলে খুব চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। তাকে ফেরান এই ম্যাচ দিয়ে সাড়ে সাত বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা ৩৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার গ্রায়েম ক্রিমার।
চাপের মুখে পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে দলকে উদ্ধার করে ফাখার ও উসমান। ফাখারের বিদায়ের পর পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৪ বলে ৩৩ রান। জয় থেকে ২৪ রান দূরে থাকতে ক্যাচ তোলেন উসমান। কাভারে ডাইভ দিয়েও বল মুঠোয় জমাতে পারেননি রাজা। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসতে পারেনি তার দলও।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৪৭/৮ (বেনেট ৪৯, মারুমানি ৩০, টেইলর ১৪, বার্ল ৮, রাজা ৩৪*, মুনিয়োঙ্গা ৩, মুসেকিওয়া ২, ইভান্স ২, মাপোসা ১, এনগারাভা ১*; আফ্রিদি ৪-০-৩৪-১, সালমান মির্জা ৩-০-২১-১, ফাহিম ১-০-১১-০, সাইম ৪-০-৩১-১, আবরার ৪-০-২৮-১, নাওয়াজ ৪-০-২২-২)
পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে ১৫১/৫ (সাহিবজাদা ১৬, সাইম ২২, বাবর ০, সালমান আলি ১, ফাখার ৪৪, উসমান ৩৭*, নাওয়াজ ২১*; এনগারাভা ৪-০-৩১-১, মাপোসা ৩.২-০-২৯-১, ইভান্স ৪-০-২৬-২, রাজা ৪-০-২৯-০, বেনেট ১-০-৪-০, ক্রিমার ৩-০-২৭-১)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নাওয়াজ
এমআর/টিএ