মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের আগে থেকেই একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল সবার মাঝে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্ট ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য একটু বিশেষই বটে। আসলে ম্যাচটা বিশেষ হওয়ার উপলক্ষ্য হচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। এই ম্যাচটি তার ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট। নিজের শততম টেস্ট ম্যাচটা অবশ্য বিশেষভাবেই রাঙাতে চাইবেন মুশফিক।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নেমেই ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটা স্থায়ীভাবে খোদাই করলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার কীর্তি গড়লেন ৩৭ বছর বয়সী মুশফিক।
নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার কীর্তি ছিল ১১ জন ক্রিকেটারের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলে ১২তম ক্রিকেটার হিসেবে এমন মাইলফলক পেতে পারেন মুশফিক। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে একশ টেস্টের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন মুশফিকুর রহিম।
নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে মুশফিক ব্যাট করতে নামলেন পাঁচ নম্বরে। একটু একটু করে রান তুলে পূরণ করলেন নিজের হাফ-সেঞ্চুরি। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু দিন শেষে আটকে রইলেন ৯৯-এ। নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরির জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে গোটা একটা রাত।
শততম টেস্ট উপলক্ষ্যে মুশফিকুর রহিমকে বিশেষ ক্যাপ পরিয়ে দিলেন তার প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। পরে তার হাতে ক্যাপ ক্যাসকেট দেন দেশের এক নম্বর টেস্ট ক্যাপধারী আকরাম খান। মুশফিকের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন মাঠে। এছাড়া তার অভিষেক টেস্টের একাদশে থাকা ক্রিকেটারদের কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন মাঠে।
পরবর্তীতে তাকে বিশেষ ক্রেস্ট উপহার দেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মুশফিকের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও শততম টেস্টের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে তুলে দেন বিশেষ টেস্ট জার্সি। সব ছাপিয়ে তাই পুরো দলের চেয়ে সকালটা নিজের করেই নিয়েছিলেন মুশফিক।
শুধু সকালই নয়, প্রথম সেশনের শেষভাগ থেকে শুরু করে তৃতীয় সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেয়া লিটন দাসও হাফ সেঞ্চুরি পাননি। বাংলাদেশের ৪ ব্যাটারেরই উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।
মুশফিকের এই বিশেষ দিনে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ। প্রথম ঘণ্টায় কোনো উইকেট না হারিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে থাকেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম এবং মাহমুদুল হাসান জয়।
কিন্তু প্রথম ঘণ্টার বিরতির ঠিক আগের ওভারে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন সাদমান। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে অবশ্য শুরুতে এলবিডব্লিউ দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সফল হয় আয়ারল্যান্ড। ৪৪ বলে ৩৫ রান করেন সাদমান। তার বিদায়ে ভাঙে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
সাদমানের বিদায়ের পর উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জয়ও। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন এই ওপেনার। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮৬ বলে ৩৪ রান।
অধিনায়ক শান্তও এদিন ব্যাট হাতে ছিলেন ব্যর্থ। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ম্যাকব্রাইনকে ছক্কা হাঁকান শান্ত। কিন্তু এর পরের বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার কাপ্তান। প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে জীবন পান মুমিনুল। ম্যাকব্রাইনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তবে কাছে গেলেও নিতে পারেননি ক্যাড কারমাইকেল। ২৩ রানে বেঁচে যান মুমিনুল। জীবন পেয়ে আর পেছনে ফেরেননি এই ব্যাটার।
মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে রাত তুলতে থাকেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। যদিও ফিফটির আগে আবারও বেঁচে যান মুমিনুল। ম্যাথু হামফ্রিজের বলে স্লিপে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন পল স্টার্লিং। ৪৯ রানে দ্বিতীয় জীবন পেয়ে এরপরের বলেই ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
মুশফিকের ফিফটির পর ম্যাকব্রাইনকে সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন মুমিনুল হক। ফেরার আগে ৬৩ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সেখান থেকে লিটন দাসকে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন মুশফিক। ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯২ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ। মুশফিক অপরাজিত আছেন ৯৯ রানে, আর লিটন ক্রিজে আছেন ৪৭ রানে।
এসএস/টিএ