তৈরি পোশাক, ট্যানারি ওষুধসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার। সংশোধিত এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে ন্যূনতম মজুরিকাঠামো পাঁচ বছর নয়, বরং তিন বছর অন্তর পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। এতে করে তৈরি পোশাক, চা-বাগান, বেসরকারি পাটকলসহ ১৩টি খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণ কার্যক্রম আগামী বছরের মধ্যে করতে হবে। কারণ, সর্বশেষ মজুরিকাঠামো কার্যকর হওয়ার পর এসব খাতের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে বা আগামী বছরের মধ্যে পূর্ণ হবে।
শ্রমিকনেতারা বলছেন, শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরেই তিন বছর অন্তর মজুরি বৃদ্ধির দাবি ছিল। শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশে দাবিটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। অন্যদিকে মালিকপক্ষের নেতারা বলছেন, প্রতিবার মজুরি পুনর্নির্ধারণের সময়, বিশেষ করে পোশাকশ্রমিকদের মজুরিকাঠামো নিয়ে আলোচনার সময় শ্রম অসন্তোষ হয়। এ জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়।
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) জারি করেছে সরকার। তার আগে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল শ্রম সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো খাতের মজুরিকাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এমন পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে, যাতে শ্রমিক তাঁর পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে পারেন। যদিও এই বিষয় নিয়ে অধ্যাদেশে কিছু বলা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিম্নতম মজুরি বোর্ড এখন পর্যন্ত ৪২টি খাতের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে তিনটি নতুন খাতসহ ১৭ খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ছয়টি খাতের মজুরি পুনর্মূল্যায়ন সময় পেরিয়ে গেছে। তবে ১৩টি খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণ চলতি বছর বা আগামী বছরের শুরু করতে হবে। ৫ বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণের আগের নিয়ম বজায় থাকলে এই ১৩ খাতের শ্রমিকের মজুরি মূল্যায়ন আরও পরে হতো। এই ১৩টি খাত হচ্ছে নিরাপত্তাকর্মী সেবা, স মিলস, প্রিন্টিং প্রেস, চিংড়ি, মাছ শিকারি ট্রলার, রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকল, হোমিওপ্যাথ কারখানা, বিড়ি, চা-বাগান, সিনেমা হল, হোসিয়ারি ও তৈরি পোশাকশিল্প।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিন বছর অন্তর মজুরি মূল্যায়ন স্বাগতযোগ্য। তবে একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল। আইন অনুযায়ী জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় মজুরি নির্ধারণের বিধান থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত হয়। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক, বিবিএসসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে মজুরি নির্ধারণ হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নাগরিকের মর্যাদা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করে তবেই মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে সামাজিক ন্যায়বিচারও এগিয়ে যাবে।
ইএ/এসএন