কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বেগম সুফিয়া কামাল নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরাধা ব্যক্তিত্ব,গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রদূত জননী সাহসিকা কবি বেগম সুফিয়া কামালের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ।১৯৯৯ সালের এই দিনে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের এ মহীয়সী। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এক বিবৃতিতে মহিলা পরিষদ জানিয়েছে, সুফিয়া কামাল যেকোনো সামাজিক অধিকার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন।আজকের দিনে কবি সুফিয়া কামালের মতো মানুষ জনগণের পাশে একান্ত প্রয়োজন।

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বেলা ৩টায় বরিশালের শায়েস্তাবাদস্থ রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের নারী জাগরণ ও নারীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উজ্জ্বল নক্ষত্র সুফিয়া কামাল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।

মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে। তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ একেবারে সীমিত থাকলেও তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন এবং ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা শুরু করেন।

সুললিত ভাষায় ও ব্যঞ্জনাময় ছন্দে তাঁর কবিতায় ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের সুখ-দু:খ ও সমাজের সার্বিক চিত্র। তিনি নারীসমাজকে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার, মুক্তিযুদ্ধসহ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে তিনি আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ছিলেন তার অন্যতম উদ্যোক্তা।

তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের শিক্ষা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অবদানের জন্য তাঁকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি বেগম সুফিয়া কামালের সাহিত্যে সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান তিনি। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে গঠিত আন্দোলনে কবি যোগ দেন। বেগম সুফিয়া কামাল শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ছাত্রী হল নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে যখন এদেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয়, তখনও তাঁর সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল।

পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যূত্থানে অংশ নেন।

১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।

সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।
সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।

সুফিয়া কামালের পাঁচ সন্তান। তারা হলেন,আমেনা আক্তার, সুলতানা কামাল, সাঈদা কামাল, শাহেদ কামাল ও সাজেদ কামাল।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের 'মন তরঙ্গ' এবার বিশ্ব মঞ্চে Nov 20, 2025
img
ইতালি যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের ২ যুবকের মৃত্যু Nov 20, 2025
img

ত্রিদেশীয় সিরিজ

লঙ্কানদের ৬৭ রানে হারিয়ে বড় জয় জিম্বাবুয়ের Nov 20, 2025
img
নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে : আমানউল্লাহ আমান Nov 20, 2025
img
তেল ও গ্যাস অন্বেষণে সমুদ্রে কৃত্রিম দ্বীপ বানাবে পাকিস্তান Nov 20, 2025
img
বিএনপি ধর্ম বেচে রাজনীতি করে না : শামা ওবায়েদ Nov 20, 2025
img
সোনম কাপুরের বেবি বাম্প দেখে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া স্বামীর! Nov 20, 2025
কঠিন কাজটাই সহজ করে দিয়েছে হামজা-শমিতরা Nov 20, 2025
বেবি বাম্পের ছবি পোস্ট করে খুশির বার্তা সোনমের Nov 20, 2025
img
জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইরানের Nov 20, 2025
img
করাচির রহস্যময় অভিযান নিয়ে সিনেমা ধুরন্ধর Nov 20, 2025
ঢাকা ৮ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেন রিকশা চালক! Nov 20, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে চুক্তির সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের Nov 20, 2025
বিভিন্ন দাবি আদায়ে শিবিরের মাত্র ১৫–২০ জনের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন! Nov 20, 2025
যেই ৪টা কারণে রিযিক কমে যায় Nov 20, 2025
img
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে : সারজিস Nov 20, 2025
img
শীত কবে থেকে বাড়তে পারে, আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা Nov 20, 2025
img
অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে অনফিল্ড আম্পায়ারের ভূমিকায় সৈকত Nov 20, 2025
img
সেনা আদেশে হস্তক্ষেপকারী ডেমোক্র্যাটদের মৃত্যুদণ্ড চান ট্রাম্প Nov 20, 2025
img
প্রস্রাব করা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল বিএনপি নেতার Nov 20, 2025