আবু সাঈদ হত্যা মামলা

সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাসনাত আব্দুল্লাহ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ট্রাইব্যুনালে এসে পৌঁছান জুলাই আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক।

এদিন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে বেরোবির সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেশ করবেন হাসনাত। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এ মামলায় বর্তমানে ছয় আসামি গ্রেপ্তার রয়েছেন। তারা হলেন, এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। আজ সকালে কারাগার থেকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এর আগে, ২৭ নভেম্বর ১৮তম দিনের মতো ২১ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৪ নভেম্বর এ মামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তার জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষী হাজির হলেও বিশেষ কারণে নেওয়া হয়নি। ২৩ নভেম্বর জবানবন্দি দেন এক শিক্ষার্থী। আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া মৃত ঘোষণার পর পথ থেকে তার লাশটি পুলিশ কেড়ে নিয়েছিল বলেও জানিয়েছেন। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও গ্রেপ্তারদের আইনজীবীরা। ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন শিক্ষার্থী শান-এ রওনক বসুনিয়া। তিনিও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

গত ১৬ নভেম্বর জবানবন্দি দিয়েছেন মিঠাপুকুর থানার ওসি মো. নূরে আলম সিদ্দিক। ১৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন। ১৩ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দেন পুলিশের নায়েক আবু বকর সিদ্দিক। ১২ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম। রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে চালানো গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ১১ নভেম্বর জবানবন্দি দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ। তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদেরও একজন ছিলেন। ১০ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। তিনিও হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। এ মামলায় যথাক্রমে ৪ নভেম্বর, ২১ ও ১৩ অক্টোবর সাক্ষী না আনতে পারায় পরপর তিনবার সময় পেছানো হয়।

গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক। তারা হলেন- এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। গত ২৮ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। একই দিন সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন।

চলতি বছরের ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাদ মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম।

২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। এর মধ্যে শরিফুলের হয়ে লড়েন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো। কনস্টেবল সুজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইমরানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান। ২৮ জুলাই এ মামলার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আর ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৬২ জন।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

“ভুল সবই ভুল, এ জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সে ভুল!” Dec 14, 2025
img
মোটরসাইকেলটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলাম: হাদির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক হান্নান Dec 14, 2025
img
ডি পল কেন স্যান্ডো গেঞ্জি পরে মাঠে এসেছিলেন? Dec 14, 2025
img
অপুর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের খবর প্রকাশ্যে আনলেন মোমো Dec 14, 2025
img

আইপিএল মক নিলাম

৭৫ লাখ রুপিতে আইপিএলে দল পেল তানজিম সাকিব! Dec 14, 2025
img
যুব এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারাল ভারত Dec 14, 2025
সফলতার কুরআনিক কোড | ইসলামিক টিপস Dec 14, 2025
img
সোমবার রাজধানীতে সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ Dec 14, 2025
img

প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত সেক্রেটারি

হাদির ওপর হামলায় জড়িত গডফাদাররা চিহ্নিত না হলে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না Dec 14, 2025
img
সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে Dec 14, 2025
img
বাড্ডায় বাসে আগুন Dec 14, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন দিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব Dec 14, 2025
img
ন্যাটোতে যোগ দেয়ার চিন্তা বাদ জেলেনস্কির Dec 14, 2025
img
হাতিয়ায় জনসংযোগকালে দুর্ঘটনায় আহত হান্নান মাসউদ Dec 14, 2025
img
হাদিকে হত্যাচেষ্টার আসল রহস্য উদঘাটন করতে হবে : পিপি ফারুকী Dec 14, 2025
img
ডিসেম্বরের ১৩ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ১৫১ কোটি ডলার Dec 14, 2025
ম্যানেজারের ভুলে ‘ব্যাটসম্যান’, আইপিএলে বল করতেও প্রস্তুত গ্রিন Dec 14, 2025
বায়ার্নের ‘গোলমেশিন’ কেইনে মুগ্ধ কোচ ভিনসেন্ট কম্পানি Dec 14, 2025
img

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা

আদালতে কি বললেন সেই মোটরসাইকেলটির মালিক? Dec 14, 2025
img
সাগরপাড়ে মিমের 'সাগরকন্যা' রূপে মুগ্ধ ভক্তরা Dec 14, 2025