গুলি লাগার পর প্রাথমিক চিকিৎসায় কি করবেন?

একটা গুলি লাগার ঘটনা হয় মৃত্যু ডেকে আনবে অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। অনেকটা জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান তৈরি করে দেয়।

তবে আহত ব্যক্তির জীবন ঝুঁকি বাড়ে বা কমে- কোথায় গুলি লেগেছে, কী ধরনের গুলি, কত দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া গেছে- এসবের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

গুলিবিদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রথম ৩০ মিনিট বা হাসপাতালে পৌঁছার আগে পর্যন্ত কী করা উচিত, কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা লাগে তা নিচে তুলে ধরা হলো-

শুরুতে যা করবেন

যদি আশপাশের কেউ গুলিবিদ্ধ হয়, তবে প্রাথমিকভাবে তিনটি কাজ খুব জরুরি—

১.নিরাপদ স্থানে যাওয়া: গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি হাঁটতে বা দৌড়াতে পারলে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সাহায্য করুন।

২. অস্ত্র নিরাপদ করুন: দুর্ঘটনাবশত গুলিবিদ্ধ হলে নিশ্চিত করুন অস্ত্র আর কারো ক্ষতি করতে যেন না পারে।

৩. ৯৯৯-এ ফোন করুন: নিরাপদে পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবায় ফোন দিন এবং অপারেটরের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোই জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে বড় উপায়।

রক্তপাত বন্ধ করুন

গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বাঁচাতে প্রথম কাজ হলো রক্তপাত থামানো। এজন্য রক্ত বের হচ্ছে এমন স্থানে শক্ত চাপ দিতে হবে। রক্তপাত বেশি হলে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার মতো জোরালো চাপও প্রয়োজন হতে পারে।

ড্রেসিং ব্যবহার করুন

গুলিবিদ্ধ স্থানে পরিষ্কার কাপড়, গজ, তোয়ালে বা যেকোনো কাপড় চেপে ধরুন। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে সুবিধা হবে।

ব্যান্ডেজ জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা-

পেশাদার টুর্নিকেট থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ভুলভাবে লাগালে বিপদ বাড়তে পারে। টুর্নিকেট না থাকলে চাপ দেওয়ার ওপরই জোর দিন।

তবে মনে রাখতে হবে-

গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে কখনই পানি, খাবার বা পানীয় দেবেন না। শকে গেলে বমি হতে পারে এবং খাবার-তরল শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে।

পা বা মাথার অবস্থান নির্ধারণ

অনেকেই আহত ব্যক্তির পা উঁচু করে দেন, এটি ভুল। এতে বুক বা পেটের গুরুতর রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্টও তৈরি হতে পারে।

ব্যক্তি সচেতন থাকলে তিনি যেভাবে আরাম পান সেভাবে বসতে বা শুতে দিন। অচেতন হলে রিকভারি পজিশন-এ (কাত হয়ে, এক পা ভাঁজ করে) রাখুন।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগলে করণীয়

১. বুকে গুলি লাগলে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও প্রধান ধমনী গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সাকিং চেস্ট উন্ড হয়, এই ক্ষত দিয়ে বাতাস ঢুকে ফুসফুস বসে যেতে পারে।

এ অবস্থায় ক্ষতটি প্লাস্টিক জাতীয় কিছু দিয়ে সিল করে দিন যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। শ্বাসকষ্ট বাড়লে সিলটি খুলে দিন।

২. পেটে গুলি লাগলে তীব্র রক্তপাত,অঙ্গ ক্ষতি এবং অন্ত্র বা পাকস্থলীর ফুটো হয়ে সংক্রমণ হতে পারে। তাই ক্ষতস্থানে শক্ত চাপ দিন। যদি পেট দ্রুত ফুলে যায়, তবে ক্ষত ছোট মনে করে ভুলবেন না। সাধারণত এই ক্ষেত্রে জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

৩. হাত-পায়ে গুলি লাগলে রক্তনালী কেটে যাওয়া, স্নায়ু ক্ষতি এবং হাড় ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আহত অঙ্গ নাড়ানো উচিত নয়। শুধু রক্তপাত থামানোর ওপর জোর দিন।

৪. ঘাড়ে বা মেরুদণ্ডে গুলি লাগলে পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোগীকে কখনোই নড়াবেন না। এতে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘাড়ের সামনে গুলি লাগলে রক্তপাত বন্ধে চাপ দিন।

গুলি লাগলে কেন ক্ষতি ভয়াবহ হয়?

বুলেট শুধু একটি ফুটোর মতো ক্ষত তৈরি করে না, শরীরের ভেতরে লাফিয়ে, ঘুরে আরও অনেক স্থানে আঘাত করতে পারে।ক্ষতি নির্ভর করে, গুলির অবস্থান, বুলেটের আকার এবং বুলেটের গতির ওপর।

চিকিৎসা ও সুস্থ হতে কত সময় লাগে?

সহজ গুলিবিদ্ধ ক্ষত (যেখানে অঙ্গ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি) ১০ দিনের মধ্যেও সেরে উঠতে পারে; কিন্তু জটিল আঘাতে সময় অনেক বেশি লাগে। অন্যদিকে মানসিক ধাক্কা ভয়, দুঃস্বপ্ন, খিদে না পাওয়া, অস্থিরতা—দীর্ঘদিন থাকতে পারে। এসব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আলোচ্য বিষয়গুলো প্রাথমিক করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে। মূল চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ইউটি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বগুড়া সদর থানায় পুলিশের কাছ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি উধাও Dec 15, 2025
img
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ Dec 15, 2025
img
পুলিশের পোশাকে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় বক্তব্য দেওয়ায় এএসআই বরখাস্ত Dec 15, 2025
img
ডিসেম্বরের ১৩ দিনেও কোনো রেমিট্যান্স আসেনি দেশের ১০ ব্যাংকে Dec 15, 2025
img
কলম্বিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অন্তত ১৭ জনের, আহত ২০ Dec 15, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজকের বাজারদর Dec 15, 2025
img
৩ দাবিতে আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা ডাকসুর Dec 15, 2025
img
রাজধানী ঢাকায় কমবে দিনের তাপমাত্রা Dec 15, 2025
img
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি, কমেছে দাম Dec 15, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক হামলার ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে ১৬ Dec 15, 2025
img

চানখারপুলে ছয় হত্যা

হাবিবুর রহমানসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু আজ Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদির ঘটনায় মেহেরপুর সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার Dec 15, 2025
img
এমবাপে ও রদ্রিগোর গোলে আলাভেসের বিপক্ষে স্বস্তির জয় রিয়াল মাদ্রিদের Dec 15, 2025
img
এলাকার উন্নয়নে ঐক্যের আহ্বান হাবিবুর রশিদ হাবিবের Dec 15, 2025
img
শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান Dec 15, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

হলান্ডের জোড়া গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে বড় ব্যবধানেই হারাল ম্যানচেস্টার সিটি Dec 15, 2025
img
আজ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে সিঙ্গাপুর Dec 15, 2025
img
১৫ ডিসেম্বর: ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Dec 15, 2025
img

বুন্ডেসলিগা

টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াল বায়ার্ন মিউনিখ Dec 15, 2025
img
ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রবাসীদের দেশ গড়ায় অবদান রাখার আহ্বান Dec 15, 2025