ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকার চলাচলে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার অনিশ্চয়তার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে।
গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ সেন্ট বা ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৪৭ ডলারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ৫১ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৫৬ দশমিক ৬৬ ডলারে লেনদেন শেষ করেছে।
তবে সাপ্তাহিক হিসাবে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই- দুটিই প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। এর আগের সপ্তাহে এই দুই সূচকেই প্রায় ৪ শতাংশ পতন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভেনেজুয়েলা নীতিকে ঘিরে সম্ভাব্য সরবরাহ ব্যাঘাতের আশঙ্কা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি উদ্যোগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা তেলের দামে চাপ সৃষ্টি করছে।
জ্বালানি বাজার বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিটারবুশ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এক নোটে জানিয়েছে, ‘ভেনেজুয়েলা ঘিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যাংকার অবরোধ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় বাজার সীমিত পরিসরে ঘুরপাক খাচ্ছে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি
ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উদ্যোগ নিলেও ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন নজর। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করে আগামী দুই বছরে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে ঋণ হিসেবে ৯০ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার জন্য তহবিল ধার করবেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ শেষের শর্তে কোনো আপসের ইঙ্গিত দেননি। বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে রুশ সম্পদ দখলের চেষ্টাকে ‘দিবালোকে ডাকাতি’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে ইউক্রেন প্রথমবারের মতো ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর একটি তেল ট্যাংকারে ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। এতে রাশিয়ার তেল পরিবহন নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
ভেনেজুয়েলা ইস্যু
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়বে কি না—সে বিষয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন নয়। ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা জোরদারের মধ্যেই এই মন্তব্য এসেছে।
বৈশ্বিক তেল সরবরাহের প্রায় ১ শতাংশ আসে ভেনেজুয়েলা থেকে। দেশটি সম্প্রতি চীনের উদ্দেশে নিষেধাজ্ঞামুক্ত দুটি তেল কার্গো পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। তবে রাশিয়া থেকে আসা প্রায় তিন লাখ ব্যারেল ন্যাফথা বহনকারী একটি নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ট্যাংকার ভেনেজুয়েলার জলসীমায় প্রবেশ করেছে। আরও কয়েকটি ট্যাংকার চলাচল বন্ধ বা দিক পরিবর্তন করেছে বলে জাহাজ ট্র্যাকিং তথ্য জানিয়েছে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, তার স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠজনদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেকার হিউজেসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির সবচেয়ে বড় শেল তেলক্ষেত্র পার্মিয়ান বেসিনে সক্রিয় রিগের সংখ্যা এক সপ্তাহে তিনটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৪৬-এ, যা ২০২১ সালের আগস্টের পর সর্বনিম্ন। ভবিষ্যৎ উৎপাদনের আগাম সূচক হিসেবে ধরা হয় রিগ সংখ্যা, ফলে এর পতন আগাম দিনে তেল সরবরাহ কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স
পিএ/টিএ