স্বল্পমেয়াদি কৃষি এবং কুটির, ক্ষুদ্র ও ছোট ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে এ জাতীয় সাধারণ ঋণ ও দুই মাস পর্যন্ত বকেয়া ঋণে (স্পেশাল মেনশন) বিপরীতে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে। এতদিন যা ১ ও ৫ শতাংশ হারে রাখতে হচ্ছিল। গতকাল রোববার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠানো হয়। গত বছরের নভেম্বরে এক নির্দেশনার মাধ্যমে সব ধরনের ঋণে অভিন্ন প্রভিশন রাখার বিধান করা হয়। এতে অনেক ব্যাংক এখন ক্ষুদ্র ঋণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নির্দেশনায় এসব ঋণে প্রভিশনের হার কমানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঋণখেলাপির শর্ত কঠোর করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার কৌশলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ দ্রুত বেড়ে গত সেপ্টেম্বর শেষে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা হয়েছে। মোট ঋণের যা ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ সময় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে রেকর্ড তিন লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, যে কোনো ঋণ বিতরণের সময়ই ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। কোনো ঋণ বকেয়া হওয়ার পর দুই মাস পর্যন্ত এসএমএ হিসেবে বিবেচিত হয়। গত বছরের নির্দেশনার আগে সাধারণ ও এসএমএ এই দুই ক্ষেত্রে ঋণের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা হারে প্রভিশন রাখতে হতো। কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণে রাখতে হতো সবচেয়ে কম। অবশ্য এখনকার মতো তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ সাব-স্ট্যান্ডার্ড বিবেচিত সব ঋণে ২০ শতাংশ প্রভিশনই রাখতে হবে। ছয় থেকে ১২ মাস পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ এবং ১২ মাসের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণে প্রভিশন রাখতে হবে শতভাগ।
গতকালের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে এখন সব ধরনের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ এবং এসএমএ হওয়ার পর ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণের পাশাপাশি কুটির, ক্ষুদ্র এবং ছোট ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করতে এখন থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি রয়েছে ৬০ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। আর সিএমএসএমই খাতে রয়েছে তিন লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এসএমএসএমই খাতের এ ঋণ মোট ঋণের মাত্র ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। দুই বছর আগে যেখানে মোট ঋণের ১৯ শতাংশের বেশি ছিল সিএমএসএমই ঋণ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে।
ইউটি/টিএ