ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনের অন্ধকার দিক নিয়ে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী রাধিকা আপ্তে। দীর্ঘদিন ধরে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া তিক্ত স্মৃতি ও মানসিক যন্ত্রণার কথা প্রকাশ্যে এনে তিনি তুলে ধরেছেন বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমায় বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক লিঙ্গবৈষম্যের ভয়াবহ চিত্র।
দুই হাজার দশকের শেষের দিকের সময়ের কথা স্মরণ করে রাধিকা জানান, শুটিং সেটে একমাত্র নারী হওয়ার কারণে তাঁকে বারবার কটূক্তি ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছে। সহঅভিনেতাদের কাছ থেকে শরীর নিয়ে বিদ্রূপ, অবমাননাকর কথা এবং অস্বস্তিকর আচরণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এসব অভিজ্ঞতা তাঁকে গভীর মানসিক আঘাত দিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
একটি ঘটনা বিশেষভাবে তাঁকে আজও তাড়া করে বেড়ায়। একটি চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁকে বুক ও নিতম্বে অতিরিক্ত প্যাড ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে সেটে তাঁকে ব্যঙ্গ করে ‘আম্মা’ বলে ডাকা হতো।
এই অভিজ্ঞতাকে তিনি অপমানজনক ও মানসিকভাবে বিধ্বংসী বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, নারীদের শরীর নিয়ে এমন দৃষ্টিভঙ্গি শিল্পের গভীর অসুস্থতারই প্রকাশ।
রাধিকা আরও বলেন, প্রেমের নামে সিনেমায় অনুসরণের মহিমান্বিত উপস্থাপন এবং নারীর সৌন্দর্য নিয়ে অবাস্তব মানদণ্ড তাঁকে দীর্ঘদিন অনিরাপদ বোধ করতে বাধ্য করেছে। পর্দার আড়ালে যে বাস্তবতা, তা অনেক সময় পর্দার গল্পের চেয়েও বেশি ভয়ংকর।
শিল্পে নারীরা ক্ষমতার জায়গায় থাকলেও বাস্তবে পরিবর্তন খুব কম বলেই মনে করেন রাধিকা। ভিতর থেকে প্রতিবাদের অভাবকে তিনি গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। এমন পরিবেশে কাজ করতে অস্বীকার করে বড় প্রকল্প ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হননি তিনি, যা তাঁর দৃঢ়তা ও আত্মসম্মানেরই পরিচয়।
বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সালি মহব্বত’-এ অভিনয় করছেন রাধিকা আপ্তে। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি চলচ্চিত্র জগতের প্রচলিত নিয়ম ও নীরবতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁর এই সাহসিকতা অন্যদের জন্যও পথ দেখাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।