স্বামীর একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতায় ভেঙে পড়লেও দমে যাননি। বরং সেই যন্ত্রণা, লড়াই আর আত্মসম্মান রক্ষার গল্পকেই বইয়ের পাতায় তুলে ধরেছেন এক জাপানি নারী। অভিযোগ, তার স্বামীর জীবনে ছিল ৫০০-রও বেশি অবৈধ সম্পর্ক। পর্নস্টার থেকে শুরু করে এসকর্ট পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার।
সম্প্রতি জাপানের এক নারীর ব্যক্তিগত জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখন অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানকে একা মানুষ করার লড়াই ও নিজের যন্ত্রণা তুলে ধরেছেন কমিকের পাতায়। স্বামীর অবিশ্বস্ততা ও সন্তানের অসুখ, দুটো চাপই সামলেছেন। নিজের জীবনের এই কঠিন অভিজ্ঞতাকেই সাহসের সঙ্গে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন।
জাপানি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন শুকান বুনশুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেমু কুসানো নামের ওই নারী বন্ধুর পরিচয়ের মাধ্যমে তার স্বামীর সঙ্গে বিয়ে করেন। স্বামীকে ‘গম্ভীর ও লাজুক’ মনে হওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছিলেন যে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।
দাম্পত্য জীবনের মধ্যেই তাদের এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। কিন্ত বিরল রোগে আক্রান্ত হয় সে।
বিশ্বজুড়ে মাত্র ৩০ জনেরও কম মানুষের মধ্যে দেখা যায় এমন অত্যন্ত বিরল রোগ। স্বামীর দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও বাড়িতে খুব একটা না আসার কারণে সন্তানের দেখভালের পুরো দায়িত্ব কুসানোকেই নিতে হয়।
সবকিছু বদলে যায় একদিন, যখন স্বামীর ব্যাগে কন্ডোম ও যৌন উত্তেজক ওষুধ খুঁজে পান তিনি। এরপর স্বামীর মোবাইলে ডেটিং অ্যাপের সন্দেহজনক নোটিফিকেশন তার সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি জানালে স্বামী নির্লজ্জভাবে দাবি করেন, কাজের চাপ থেকেই এসব সম্পর্কে জড়াতেন এবং এতে তার কোনো অনুশোচনা নেই।
রাগ ও হতাশার মধ্যেই কুসানো প্রমাণ জোগাড় করতে শুরু করেন। ফোন চ্যাট ও বিভিন্ন রেকর্ড ঘেঁটে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীর পরকীয়ার সংখ্যা ৫২০। এর মধ্যে রয়েছে এসকর্ট গার্ল থেকে শুরু করে পর্নস্টার পর্যন্ত।
প্রথমে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবলেও, পরে তিনি বুঝতে পারেন এতে তাদের অসুস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এরপর তিনি স্বামীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে জানা যায়, স্বামী যৌন আসক্তি বা সেক্স অ্যাডিকশনে ভুগছেন, যার সূত্রপাত হয়েছিল স্কুলজীবন থেকেই।
যোগা জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুসানো বলেন, এই রোগ সম্পর্কে জানার পর বিষয়টি সামলানো তার পক্ষে কিছুটা সহজ হয়। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন এবং থেরাপিতেও সঙ্গে যান।
বর্তমানে স্বামীর থেকে আলাদা থাকছেন কুসানো এবং একাই ছেলেকে মানুষ করছেন। নিজের মানসিক আরোগ্যের পথ হিসেবে তিনি জাপানি মাঙ্গা শিল্পী পিরোইও আরাইয়ের সহায়তায় নিজের জীবনকাহিনী নিয়ে একটি কমিক তৈরি করেছেন।
পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন একটি বইও।
কুসানোর কথায়, ‘যা-ই ঘটুক না কেন, আমার প্রিয় সন্তানকে মানুষ করতে নিজের সর্বস্ব দেওয়ার জন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই।’
এই গল্প ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন নেটিজেন লিখেছেন, ‘অনেক পরিবারে নারীরা স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা চুপচাপ সহ্য করেন। কুসানো তার যন্ত্রণা ভাগ করে নিয়ে অন্যদের সাহস জুগিয়েছেন-এটাই তাকে আলাদা করে তোলে।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘স্বামীর ভুলের বোঝা স্ত্রীর কাঁধে থাকা উচিত নয়। নিজের ও সন্তানের জন্য ভালো জীবন চাওয়াটা আমাদের অধিকার।’
সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
টিকে/