পর্দায় অনেক সময় নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেও বাস্তব জীবনেও সত্যিকারের ত্রাণকর্তা ছিলেন এই মার্কিন অভিনেতা। বলা হচ্ছে সদ্য প্রয়াত জেমস র্যানসনের কথা। ৪৬ বছর বয়সী জেমসের প্রয়াণে যখন শোকের ছায়া নেমেছে ভক্তমহলে, তখনই সামনে উঠে এলো তার এক অসামান্য বীরত্বের গল্প।
জেমস র্যানসনের মৃত্যুর পর মলি ওয়াটস নামের এক নারী ইনস্টাগ্রামে এক আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেন। জানান, যখন তারা প্রতিবেশী ছিলেন, তখন জেমস তাকে এক ভয়াবহ যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। সেই পোষ্টে মলি লেখেন, আমি সাধারণত এসব ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ করি না, কিন্তু আজ জনসমক্ষে বলতে চাই, আমি এই মানুষটির কাছে চিরঋণী। তিনি না থাকলে আজ আমার জীবনের গতিপথ হয়তো অন্যরকম হতো।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মলি উল্লেখ করেন, ‘বাড়ির দোরগোড়ায় এক আততায়ী আমাকে আক্রমণ করে, মুখ চেপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। আমি চিৎকার দিলেও, তখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি বুঝতে পারছি, আমি ধর্ষণের শিকার হতে যাচ্ছি। সে সময় আমার চিৎকার শুনে পিজে (জেমস র্যানসন) ছুটে আসেন; খালি গায়েই হাতে একটি পাইপ নিয়ে। সেই আততায়ীকে ধাওয়াও দেন। এরপর পুলিশ সেই অপরাধীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়; যে কিনা একজন চিহ্নিত যৌন অপরাধী ছিল।’
মলি আরও উল্লেখ করেন, ‘জেমস হয়তো নিজের জীবনেও অনেক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছেন, যা তাকে ভেতর থেকে একা করে দিয়েছিল। তবুও অন্যদের বিপদে তিনি ছিলেন আপসহীন। যারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, অসহায় কিংবা যন্ত্রণায় ছটফট করে, এই পৃথিবীটা তাদের প্রতি খুব কমই সদয় হয়।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজ বাসভবন থেকে ৪৬ বছর বয়সী এই অভিনেতার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, গলায় ফাঁস লেগে জেমসের মৃত্যু হয়েছে।
আলোচিত হরর সিনেমা ‘আইটি চ্যাপ্টার টু’-তে এডি ক্যাসপব্র্যাক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জেমস। শুরুতে তার চরিত্রটি ভীতু প্রকৃতির থাকলেও শেষ পর্যায়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্ধুদের বাঁচাতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তিনি। তার এই পর্দার সাহসিকতা দর্শকদের মনে গভীর দাগ কেটেছিল। এছাড়া ‘সিনিস্টার’ সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তিতে একজন ডেপুটি অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন জেমস, যেখানে একটি পরিবারকে অতিপ্রাকৃত অপশক্তির হাত থেকে বাঁচাতে লড়াকু এক ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।
পর্দায় বারবার নিজেকে সাহসী হিসেবে প্রমাণ করা জেমস বাস্তব জীবনেও যে একজন নায়ক ছিলেন, তা মলি ওয়াটসের এই পোস্টের মাধ্যমেই স্পষ্ট। এই নারীর দাবি কিংবা স্বীকারোক্তিই যেন প্রমাণ করে, পর্দার সব নায়ক শুধু অভিনয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, কিছু নায়ক থাকেন যারা বাস্তব জীবনেও অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন।
এমআর/এসএন