রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতারা যখন বাস ব্যবহার করেন, তা নিছক যাতায়াতের জন্য নয় এটি একটি শক্তিশালী বার্তা, প্রতীক এবং কৌশলের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে, যেখানে ঐতিহ্যবাহীভাবে রাজনৈতিক শোভাযাত্রা বা মিছিলে খোলা ট্রাকের ব্যবহার প্রধান ছিল, সেখানে সম্প্রতি বাস ব্যবহারকে কেন্দ্র করে নতুন একটি রাজনৈতিক ভাষা ও সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে এটি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তান ও কিউবায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী প্রচারণায় ‘ক্যাম্পেইন বাস’ হিসেবে সুসজ্জিত বাস ব্যবহার হয়ে আসছে। এসব বাস শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং চলন্ত রাজনৈতিক মঞ্চ, নিরাপত্তার কেন্দ্র ও জনসংযোগের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে।
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে লাল রঙের ‘নিউ লেবার, নিউ ব্রিটেন’ স্লোগান লিখিত বাস ব্যবহার করে জনসম্পৃক্ততার এক নতুন যুগ সূচনা করেছিল। জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও তুরস্কের রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানও নিরাপদ, বুলেটপ্রুফ বাসে নির্বাচনী সফর করেছেন। পাকিস্তানের ইমরান খান ‘চলন্ত সমাবেশ’ হিসেবে বাসকে কৌশলগত মঞ্চে পরিণত করেছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শোভাযাত্রায় খোলা ট্রাকের প্রাধান্য ছিল। নেতারা ট্রাকে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন, যা আন্দোলনের প্রাণচাঞ্চল্যের প্রতীক। তবে সম্প্রতি ১৭ বছর পর দেশে ফিরে তারেক রহমান একটি নির্দিষ্ট বাস ব্যবহার করে তা বদলে দিতে শুরু করেছেন।
বড় নেতারা বাস বেছে নেন কারণ:
সর্বোচ্চ দৃশ্যমানতা:
বড়, উঁচু বাস সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
জনতার কাছাকাছি থাকার বার্তা: বাস গণপরিবহনের প্রতীক, যা ব্যক্তিগত এসইউভি বা বিলাসবহুল গাড়ির চেয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেই নেতাকে উপস্থাপন করে।
নিরাপত্তা:
আধুনিক বুলেটপ্রুফ বাস ভেতরে শক্তিশালী সুরক্ষা দিয়ে নেতাদের ঝুঁকি কমায়।
বাংলাদেশে যখন কোনো শীর্ষ নেতা ধারাবাহিকভাবে একই বাস ব্যবহার করেন গণসংবর্ধনা থেকে শুরু করে পারিবারিক সমাধি বা জাতীয় স্মৃতিসৌধ তবে তা নিছক পরিবহন নয়, একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতীকে রূপ নেয়।
এটি দেখায় যে দেশের রাজনৈতিক বাহন সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। যদিও এটি পশ্চিমা ‘ক্যাম্পেইন বাস কালচার’র সরাসরি অনুকরণ নয়, তবু আধুনিক রাজনৈতিক যোগাযোগ ও কৌশলের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। খোলা ট্রাকের আবেগ ও উন্মুক্ততার পাশাপাশি এখন সচেতন ও নিয়ন্ত্রিত দৃশ্যমানতার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সুতরাং, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় নেতাদের বাস ব্যবহার এখন নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে কাজ করছে। এই প্রবণতা নতুন হলেও, তারেক রহমানের উদাহরণ দেখিয়ে দিচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাহন সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
টিজে/টিকে