‘সালমান খান’ এই নামটি উচ্চারণ করলেই যেন একসঙ্গে ভেসে ওঠে অ্যাকশন, আবেগ, বিতর্ক, দানশীলতা আর এক অদ্ভুত জনপ্রিয়তার গল্প। আজ তার জন্মদিন। বয়স বাড়ে, কিন্তু তার চারপাশের উন্মাদনা যেন একটুও কমে না। বলিউডে অনেক তারকা এসেছেন, গেছেন কিন্তু ‘ভাইজান’ হয়ে ওঠা খুব কম জনের ভাগ্যে জোটে।
সালমান খানের তারকাখ্যাতি শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। কিন্তু মজার বিষয় হলো তিনি প্রথম থেকেই শুধু ‘নায়ক’ ছিলেন না, ছিলেন স্বপ্নের প্রতীক। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা তার মধ্যে খুঁজে পেয়েছে সাহস, বেয়াড়া আত্মবিশ্বাস আর নিজস্ব স্টাইল। তার হাঁটা, কথা বলা, পোশাক সবকিছুতেই ছিল একটা ‘আমি যেমন, তেমনই’ ভাব।
বলিউডে যেখানে পরিশীলিত রোমান্টিক নায়কের আধিপত্য ছিল, সেখানে সালমান খান এলেন খানিকটা কাঁচা, খানিকটা বিদ্রোহী রূপে। এই আলাদা সত্তাটাই তাঁকে আলাদা করে তুলেছে।
পর্দায় তিনি যতই শক্ত, বাস্তবে সালমান খান ঠিক ততটাই সংবেদনশীল-এমনটাই বলেন তাকে কাছ থেকে দেখা মানুষজন। অনাথ শিশু, অসহায় শিল্পী কিংবা চিকিৎসার খরচ বহন করা এসব কাজ তিনি কখনো প্রচারের আলোয় আনেন না। তার প্রতিষ্ঠিত মানবকল্যাণমূলক উদ্যোগ বহু মানুষের জীবনে নীরব পরিবর্তন এনেছে।
এই দ্বৈত সত্তা একদিকে রাফ অ্যান্ড টাফ নায়ক, অন্যদিকে নীরব দাতা তাকে আরও মানবিক করে তোলে। সম্ভবত এখানেই তার প্রতি মানুষের আবেগের মূল সূত্র।
সালমান খান মানেই বিতর্ক এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। ব্যক্তিগত জীবন থেকে আইনি জটিলতা, একাধিক ঘটনায় তিনি শিরোনামে এসেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসবের মাঝেও তার জনপ্রিয়তায় বড় কোনো ধস নামেনি।
বরং সময়ের সঙ্গে তিনি যেন আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। হয়তো মানুষ তার ভুলগুলোকে মানবিক দুর্বলতা হিসেবেই দেখেছে, অথবা তার অনুতাপ আর নীরবতা অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়েছে।
ভক্তরা তাকে ‘ভাইজান’ বলে ডাকেন। এটা নিছক ডাকনাম নয়, এক ধরনের সম্পর্ক। বড় ভাই যেমন পরিবারকে আগলে রাখে, তেমনি সালমান খানও তার সহশিল্পী, নতুন অভিনেতা কিংবা কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। অনেক নতুন মুখ তার হাত ধরেই বলিউডে জায়গা পেয়েছেন। এই ভাইজান হয়ে ওঠার পেছনে আছে কর্তৃত্ব নয়, বরং দায়িত্ববোধ। তাই তো বয়স বাড়লেও তিনি শুধু নায়ক নন, হয়ে উঠেছেন এক প্রজন্মের অভিভাবকসুলভ চরিত্র।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্যামেরার সামনে থেকেও সালমান খান নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলেননি। ট্রেন্ড বদলেছে, গল্পের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু তার মূল সত্তা ‘সরাসরি কথা বলা, আবেগকে লুকিয়ে না রাখা’ অটুট আছে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু সিনেমার নায়ক নন, এক সাংস্কৃতিক উপস্থিতি। টেলিভিশন, সমাজকর্ম, বিনোদন সবখানেই তার প্রভাব স্পষ্ট।
কেএন/টিএ