ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া গণ অধিকার পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মুরারীদহ গ্রামের নবাই বিশ্বাসের ছেলে। শনিবার তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা থেকে কালীগঞ্জে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। এদিন দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ ধারণ করে বিএনপির রাজনীতি করেছি। এই আসনে বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু কাউকে দেওয়া হয়নি। যাকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে সে বিএনপির কেউ না। দলের নেতাকর্মীদের দাবিতে আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবো।’
এদিকে, রাশেদ খাঁনকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কালীগঞ্জের বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কান ধরে ও নাকে খত দিয়ে বিএনপির রাজনীতি ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছে যুবদল নেতাসহ দুইজন। এছাড়াও কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করেছে নেতাকর্মীরা। রাশেদ খাঁনের মনোনয়ন বাতিল না হলে গণ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা এ মনোনয়ন বাতিল করে বিএনপির স্থানীয় কোনো একজনকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন।
এ আসন থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামানের সহধর্মিণী মুর্শিদা জামান, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশেদ খাঁনের ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়ার পর মশালমিছিলের ঘোষণা দেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। পরে মশালমিছিল না করে সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ থানা রোডে দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করেন তারা। সাইফুল ইসলাম ও মুর্শিদা জামান পক্ষের নেতা-কর্মীরা সম্মিলিতভাবে এ কর্মসূচি পালন করেন। দলের কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ আলী জানান, ‘আমাদের মশালমিছিলের কর্মসূচি ছিল। বিশেষ একটি কারণে সেটি স্থগিত করে সমাবেশের মাধ্যমে এই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি করা হয়েছে।’
তবে রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদানকে নির্বাচনী কৌশল বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন। তিনি বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তেই রাশেদ খাঁন বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আবার যথাসময়ে গণঅধিকারে ফিরবেন। নির্বাচনী কৌশল হওয়ার কারণে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও আমরা তার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করবো। রাশেদ খাঁন আবার ব্যাক করবেন বা কী করবেন, এটাও দলীয় সিদ্ধান্তে হবে।’
দলটির জেলা সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পর এই উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব ছিল নূর ও রাশেদ এবং গণঅধিকার পরিষদের নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে যে প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল, সেই ত্যাগী নেতাদের সংসদে নেতৃত্বের বিষয় সহজতর করা। কিন্তু তারা বড় দল দলগুলোর দ্বারা বায়াস্ড হয়ে এই পথটাকে কঠিন করেছে। আরপিও জারি করে আজকের এ কৌশল করেছে কুচক্রী মহল। আরপিওর ফাঁদে পড়ে রাশেদকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, রাষ্ট্র বাধ্য করেছে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন বিএনপিতে যুক্ত হয়ে সংসদে তার বিপ্লবী চেতনা, শহীদদের বক্তব্য তুলে ধরবে।’
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন , ‘রাশেদ খাঁন দেশের জন্য ওই জায়গা গেছে। রাশেদ খাঁন এই মুহূর্তে বিএনপি আমরা গণঅধিকার, আমরা সাবেক সাধারণ সম্পাদককে সহযোগিতা করছি না, আমরা সহযোগিতা করছি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে।’
এদিকে রাশেদ খাঁনের যোগদানের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করবো না। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা ডেকেছি। সভা শেষে বাকি কথা হবে।’
ঝিনাইদহ-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ‘গণঅধিকার থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে না, এ জন্য আদর্শ বিবর্জিত হয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।’
ঝিনাইদহ-৪ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও সদরের ৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৬১ হাজার ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ হাজার, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ ও হিজড়া ভোটার রয়েছে ৫ জন।
কেএন/টিকে