বেনাপোলসহ দেশের সব স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন, সংরক্ষণ, হ্যান্ডলিং ও যাত্রীসেবায় মাশুল (ট্যারিফ) গড়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে অন্য স্থলবন্দরের তুলনায় বেনাপোল স্থলবন্দরে মাশুল কিছুটা বেশি। আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন এই হার কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের সই করা দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলের জন্য একটি এবং কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য সব স্থলবন্দরের জন্য অন্য প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
ভারতের সঙ্গে দেশের স্থলপথে বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই সম্পন্ন হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। তাই পণ্য ও যানবাহনের চাপ বিবেচনায় এই বন্দরের জন্য আলাদা মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের বিদ্যমান ট্যারিফের ওপর ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের নতুন হার ঠিক করা হয়েছে।
নতুন তালিকা অনুযায়ী, বেনাপোল স্থলবন্দরে ট্রাক, বাস ও লরির প্রবেশ ফি বেড়ে হয়েছে ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা। ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও পিকআপের ক্ষেত্রে এই ফি ১১০ টাকা ৮২ পয়সা। এছাড়া ছোট যানবাহন, মোটরসাইকেল ও ভ্যানের প্রবেশ ফিও বাড়ানো হয়েছে।
বন্দরে পণ্য রাখার ক্ষেত্রে প্রথম তিন দিন কোনো ভাড়া লাগবে না। তবে এরপর থেকে ভাড়ার হার বাড়বে। সাধারণ পণ্যের ক্ষেত্রে গুদামে প্রতি টন দৈনিক ভাড়া ১৩ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ৯৮ পয়সা করা হয়েছে। সুতা, কাপড়, চা, কাগজ, চামড়া ও কাঠসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের সংরক্ষণ খরচও বেড়েছে।
শ্রমিক দিয়ে পণ্য ওঠানামা ও গুদামে সাজানোর ক্ষেত্রে হ্যান্ডলিং চার্জ প্রতি টনে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা ৭৬ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া ক্রেন, ফর্কলিফটসহ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে।
বেনাপোল যাত্রী টার্মিনাল ব্যবহারের খরচও বেড়েছে। প্রবেশ, অপেক্ষা ও সেবা চার্জ মিলিয়ে যাত্রীদের এখন গুনতে হবে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা, যা আগে ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা।
বেনাপোল ছাড়া ভোমরা, বুড়িমারী, তামাবিল, আখাউড়া ও সোনামসজিদসহ অন্যান্য স্থলবন্দরের জন্যও ২০২৫ সালের ট্যারিফের ওপর ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে এসব বন্দরেও বর্ধিত ফি কার্যকর হবে।
বিশেষ বিধান হিসেবে বলা হয়েছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে লোডিং-আনলোডিং চার্জ কেবল তখনই কার্যকর হবে, যখন কর্তৃপক্ষ সেখানে সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে মাশুল আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক পণ্যের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাড়ার দ্বিগুণ বা ২০০ শতাংশ হারে চার্জ দিতে হবে। তবে রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে গুদাম ভাড়ায় ১০ শতাংশ ছাড় বহাল থাকবে। চালানে ওজনে ভুল ঘোষণা ধরা পড়লে প্রকৃত ওজনের ভিত্তিতে ভাড়া আদায় করা হবে। এছাড়া সরকারি আদেশ বা কাস্টমসের কারণে পণ্য খালাসে বিলম্ব হলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ল্যাবের ভাড়া ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। সব ধরনের চার্জের ওপর সরকার নির্ধারিত ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।
বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, মাশুল বৃদ্ধির ফলে আমদানি খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শিল্পপণ্যের দামে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, 'ট্যারিফ প্রতিবছরই বাড়ছে, কিন্তু বন্দরের অবকাঠামো ও সেবা সেই হারে উন্নত হচ্ছে না। এতে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।'
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, 'বন্দরের চার্জ বেড়ে গেলে আমদানির সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে সরাসরি ভোক্তার ওপর। কেননা দেশের ৮০ শতাংশ আমদানি হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।'
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫ শতাংশ হারে ট্যারিফ বাড়ানোর বিধান রয়েছে। সরকারের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনে যেকোনো সময় এই হার পুনর্নির্ধারণ করা হতে পারে।
এবি/টিকে