বলিউডের পরিচিত মুখ আরশাদ ওয়ারসীর জীবনের এক অধ্যায় আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। কলেজজীবনের পরিচয় থেকে যে সম্পর্কের শুরু, তা একসময় গিয়ে ঠেকে বিয়ের প্রস্তাবে। কিন্তু সেই পথ মোটেও সহজ ছিল না। ধর্মের ভিন্নতা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর বেকারত্ব সব মিলিয়ে ভয় আর দ্বিধায় ভরে উঠেছিল মারিয়া গোরেত্তির পরিবার।
মারিয়া ও অরশদের আলাপ কলেজে। একটি অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে হাজির ছিলেন অরশদ, সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। নাটকের দলের সূত্রে সেই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে রূপ নেয় গভীর সম্পর্কে। কয়েক বছর প্রেমের পর বিয়ের কথা তুলতেই প্রথমে পিছিয়ে যান মারিয়াই। অরশদের কথায়, তিন বার না বলার পর অবশেষে হ্যাঁ বলেন তিনি।
এর পর শুরু হয় আরও বড় পরীক্ষা। মারিয়াকে নিয়ে অরশদ হাজির হন তাঁর মা-বাবার সামনে। খ্রিস্টান পরিবারে স্বাভাবিকভাবেই ভয় কাজ করছিল। একদিকে ধর্মের অমিল, অন্যদিকে অরশদের তখনও স্থায়ী কোনও কাজ নেই। মেয়েকে মুসলিম ছেলের হাতে তুলে দিলে সে সুখী হবে তো এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁদের মনে।
অরশদ নিজেই স্মৃতিচারণায় বলেন, মারিয়ার মা-বাবা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মভীরু। যিশু খ্রিস্টের প্রতি তাঁদের অগাধ বিশ্বাস। সেই জায়গা থেকে একজন মুসলিম, তাও আবার নির্দিষ্ট চাকরি নেই—এমন যুবকের সঙ্গে মেয়ের ভবিষ্যৎ ভাবতেই তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে ছবিটা।
পরিচয়ের পর তাঁরা বুঝতে পারেন, মানুষ হিসেবে অরশদ অত্যন্ত যত্নশীল ও আন্তরিক। ধীরে ধীরে বিশ্বাস জন্মায়, তাঁদের মেয়ে সত্যিই এই মানুষটির সঙ্গে সুখে থাকবে। সেই বিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত সমস্ত দ্বিধা ভেঙে দেয়।
আজ পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাম্পত্যে আবদ্ধ মারিয়া ও অরশদ। পিছনে ফিরে তাকিয়ে অভিনেতা বুঝতে পারেন, সেই ভয় আর সংশয় পেরিয়েই তৈরি হয়েছে এক দৃঢ় সম্পর্ক। ধর্ম বা পেশা নয়, পারস্পরিক সম্মান আর ভালবাসাই যে দাম্পত্যের আসল ভিত্তি এই গল্প যেন বারবার সেটাই মনে করিয়ে দেয়।
এমকে/টিএ