সংসদ সদস্য হওয়ার চেয়েও জনগণের সামগ্রিক স্বার্থ অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সাবেক উপদেষ্টা ও এনসিপির মুখপাত্র আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার কাছে নির্বাচন কিংবা সংসদ সদস্য হওয়ার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ জনগণের সামগ্রিক স্বার্থ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ঢাকা-১০ আসনের সম্মানিত এলাকাবাসী, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে সুস্থ ও নিরাপদ আছেন। আপনারা জানেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা থেকে নেওয়া নয়, বরং বাংলাদেশের সভ্যতাগত রূপান্তরের যে ভিশন আমি লালন করি, এই সিদ্ধান্ত ছিল সেই ভিশনকে বাস্তবে রূপদানেরই অংশ। হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচরের জীবনসংগ্রাম, নিউমার্কেটের প্রাণচাঞ্চল্য, ধানমন্ডির নাগরিক ঐতিহ্য এবং কলাবাগানের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে পুরাতন ও নতুন ঢাকার যে অনন্য সম্মিলন, তা আমার কাছে এই অঞ্চলকে কেবল একটি নির্বাচনী আসন নয়, বরং এক অমিত সম্ভাবনাময় ভূমিতে পরিণত করেছে।
অতীতের গৌরব, বর্তমানের বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, সবকিছু মিলিয়ে ঢাকা-১০ আমার কাছে এক অনন্য সংযোগস্থল। এছাড়াও এই এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে আমার ব্যক্তিগত জীবনের বহু স্মৃতি, আবেগ ও ভালোবাসা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর আমি ছুটে গিয়েছিলাম আপনাদের কাছে, আপনাদের কথা শুনতে, আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসার সান্নিধ্য পেতে। সময়টা ছিল অল্প, কিন্তু আপনাদের অকুণ্ঠ সাড়া, আন্তরিকতা ও যে আশা আমি প্রত্যক্ষ করেছি, তা আমার সারাজীবনের শক্তি হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, তবে সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও উদ্ভূত রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও আদর্শিক বাস্তবতায়, দল, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমি জানি, এই সিদ্ধান্ত আমার জন্য যতটা কষ্টকর, আপনাদের জন্য তার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার কাছে নির্বাচন কিংবা সংসদ সদস্য হওয়ার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ জনগণের সামগ্রিক স্বার্থ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি এনসিপিতে যোগদান করেছি এবং দলটির মুখপাত্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। একই সঙ্গে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা বিষয়ক কমিটির প্রধান হিসেবেও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে আগামী জাতীয় সংসদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়।
আসিফ মাহমুদ লেখেন, আপাতত নির্বাচন করছি না, এর অর্থ এই নয় যে ঢাকা-১০ আসনের মানুষদের প্রতি আমার দায় ও ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটল। আমি নির্বাচনে থাকি বা না থাকি, আপনাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার আমি সর্বদা ধারণ করি, ভবিষ্যতেও করবো। জনগণের ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা ও উন্নয়নের প্রশ্নে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমার অবস্থান অবিচল থাকবে। আগামীর পথচলায় আমি আপনাদের দোয়া ও সমর্থন কামনা করি এবং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের দোয়া ও সমর্থন সঙ্গে থাকলে দেশ ও জাতির কল্যাণে আমি আরও বৃহৎ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবো।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমি কিছু কথা বলতে চাই আমার জন্মস্থান, আমার শেকড়, আমার আবেগ ও ভালোবাসার প্রিয় মুরাদনগরের মানুষদের প্রতি। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আপনারা আপনাদের এই সন্তানের ওপর যে সমর্থন ও ভরসা রেখেছেন, তা আমি আজীবন ধারণ করে রাখব। নতুন বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবেশ, মূল্যবোধ ও চর্চা আমরা গড়ে তুলতে চাই, তা ইনশাল্লাহ অচিরেই মুরাদনগরে প্রতিষ্ঠিত হবে। আপনাদের একজন হয়েই সেই লড়াইয়ে আমি আপনাদের কাতারে শামিল রয়েছি, থাকব। অতীতের মতোই, মুরাদনগরের যেকোনো শুভ কাজে আপনারা আমাকে আপনাদের পাশেই খুঁজে পাবেন। আমার আগামীর রাজনৈতিক পথচলায় আপনাদের দোয়া ও সমর্থন আমি কামনা করছি।
এসএস/এসএন