ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত থাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর, বসুন্দিয়া) আসনের বিএনপি প্রার্থী তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের (টিএস আইয়ূব) প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) যশোরের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসানকে চিঠিটি দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির ঢাকা ধানমন্ডি মডেল শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রিয়াদ হাসান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম রাইসুল ইসলাম নাহিদের সাক্ষরিত চিঠিতে টিএস আইয়ুবকে ‘ঋণ খেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে।
টিএস আইয়ুব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ হতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা হতে ঋণ গ্রহণ করেন।
২০১৮ সাল থেকে তিনি একজন ঋণখেলাপি; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্টে তিনি একজন মন্দজনিত ঋণখেলাপি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঋণ গ্রহণের পাশাপাশি বৈদেশিক রফতানি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত দলিলাদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। যে টাকা অনাদায়ী ও অপ্রত্যাশিত হিসাবেই আছে। যার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের এবং চার্জশিট দেন।
এ ছাড়া ঢাকা ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি দেন। পরবর্তীতে ব্যাংক অর্থজারি মোকদ্দমা দায়ের করে, বর্তমানে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে আছে। উক্ত মামলা ছাড়াও ব্যাংক তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত সি আর মামলা করেছে; যা বর্তমানে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে, ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের নির্বাচনী এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রার্থিতা গ্রহণ না করাসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।
এ বিষয়ে টিএস আইয়ুব বলেন, ঋণখেলাপি ছিলাম, আদালতের মাধ্যমে এখন নাই। তার পরেও যদি ব্যাংক কোনো চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে বিস্তারিত ব্যাংক বলতে পারবে। আমি এখন ঋণখেলাপি নই বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, ‘টিএস আইয়ূবের বিরুদ্ধে ঢাকা ব্যাংক থেকে একটি চিঠি এসেছে। মনোনয়ন যাচাই বাছাইকালে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে।’
এ দিকে যশোর-৪ আসনে টিএস আইয়ুব ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার ফারাজী। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন টিএস আইয়ুবের ছেলে ফারহান সাজিদ।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, দলীয় কৌশল হিসেবে দল আসনটিতে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে দুজনকে রেখেছে।
এসএস/এসএন