‘খালেদা জিয়ার বয়স এখন আশির ওপরে। রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো আশির ওপরে। এমনিই তো সময় হয়ে গেছে। তাঁর মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই।’ - কথাগুলো পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার, বলেছিলেন ২০২৩ সালের অক্টোবরে। তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়েই বলেছিলেন কথাগুলো।
সেই হাসিনা গতকাল খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকবার্তা জানিয়েছেন। শুধু তিনি একাই নন, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও শোকবার্তা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের মৃত্যুতে। তবে এসব কথা ‘ভণ্ডামির বহিঃপ্রকাশ’ কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ডেভিড বার্গম্যান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোম মাধ্যম এক্সে এক পোস্টের মাধ্যমে এই কথা জানান তিনি।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। শুরুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সময়ের সঙ্গে তা তীব্র বৈরিতায় রূপ নেয়, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘দ্য ব্যাটলিং বেগমস’ নামে পরিচিতি পায়।
বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক সীমা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশে পরিণত হয়। এর ফল হিসেবে খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, বালুর ট্রাক দিয়ে বাসভবন অবরুদ্ধ করা, একের পর এক মামলা এবং শেষ পর্যন্ত কারাবরণের মুখে পড়তে হয়। এর সঙ্গে সময়ে সময়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য তো ছিলই। এসব ঘটনাকে বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখেছে।
এত কিছুর পর খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সেই শেখ হাসিনা গতকাল শোকবার্তা জানান। তবে এমন কিছুকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান দেখছেন বেশ সন্দেহের চোখে। তিনি সম্প্রতি এক পোস্টে অতীতের ইতিহাস তুলে ধরে জানান, ‘খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার চেষ্টা সফল হলেও আওয়ামী লীগের বিএনপিকে ভেঙে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টাটা আলোর মুখ দেখেনি। এত কিছু করার পর খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের শোকবার্তা আর উদার মন্তব্যগুলোকে কীভাবে দেখা হবে? মহানুভবতা ও সৌজন্যের নিদর্শন? নাকি গভীর ও বিকৃত ভণ্ডামির বহিঃপ্রকাশ? কে জানে, হয়তো এটা এই দুয়েরই মিশ্রণ!’
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
টিজে/এসএন