জেনে নিন, শিলাবৃষ্টি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেশি হয় বলে, তখন শিলাবৃষ্টি হতে দেখা যায়; বিশেষ করে কালবৈশাখীর সময়। গ্রীষ্মকালের অতিরিক্ত গরম শিলাবৃষ্টির একটি কারণ বলে ধরে নেয়া হয়।

চলুন জেনে নিই, শিলাবৃষ্টি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ঝড়ো আর সংকটপূর্ণ আবহাওয়াতে যখন শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন শিলা তৈরি হয়। যখন “Convective Cell” (এ সম্পর্কে নিচে পাদটীকায় দেয়া আছে) তৈরি হয়, তখন উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে, আর শীতল বায়ু নিচের দিকে নামতে থাকে। যখন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ খুব শীতল পানির উৎস পাওয়া যায়, তখন ওই শীতল পানির দানা আর শীতল বায়ুর সংমিশ্রণে মেঘে বরফ জমতে থাকে।

উর্ধ্বমুখী বায়ু এমন একটা অবস্থানে পৌছায় যেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে চলে যায়, অর্থাৎ যেখানে পানি বরফ হতে শুরু করে। একপর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুতে সৃষ্ট বরফ খণ্ডগুলো ওই বায়ুর প্রবাহ থেকে ছুটে গিয়ে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এই ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর উপরে উঠে যাওয়ার পরে বরফ কণা সৃষ্টি হয়ে নিম্নগামী হওয়ার প্রক্রিয়া পুনঃ পুনঃ চলতে থাকে এবং বরফ কণার উপর বার বার আস্তরণ জমা হয়ে তা বরফ খণ্ডের আকার নেয়। এই ঊর্ধ্বমুখী বাতাসের কিন্তু বেশ ভালোই গতি থাকতে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গতি ৬০ মাইল/ঘণ্টাও হতে পারে।

মজার ব্যাপার হল, আপনি যদি একটা শিলা খন্ডকে অর্ধেক করে কেটে নিতে পারেন, তাহলে এর ভেতরকার কেন্দ্রীভূত স্তরগুলো আপনার কাছে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। যখন শিলা ঊর্ধ্বাকাশ থেকে পতিত হতে থাকে, তখন এটি পতনশীল অবস্থায় কিছুটা গলে যায়। আর এমন তাপমাত্রায় গলে, যার কারণে এটা আবার ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর সঙ্গে উপরে উঠে যায়। সুতরাং, এর থেকেই বোঝা যায় যে খুব বড় আকারের শিলাখন্ড আসলে অনেক বারের পুনঃ প্রক্রিয়ার ফসল।

এই শিলাখন্ডগুলো বৃষ্টির পানির কণা বা মেঘকে আশ্রয় করে ক্রমশ ভারি হয়ে উঠে এবং ঊর্ধ্বগামী বায়ু যখন আর এতটা ভারি কণা বহন করতে পারে না, তখন শিলাখন্ড বৃষ্টির সঙ্গে ভূমিতে পতিত হতে থাকে। যাকে আমরা শিলাবৃষ্টি হিসেবে দেখতে পাই। সাধারণত এই শিলাবৃষ্টির স্থায়িত্ব ১৫ মিনিটের বেশি হয় না।

Convection cell প্রবাহী পদার্থের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়, যখন তরল অথবা গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্বে পার্থক্য দেখা দেয়। যখন নির্দিষ্ট প্রবাহীকে তাপ প্রয়োগ করা হয়, এর আয়তন বেড়ে যায় এবং ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে এবং ওই আয়তনের তরলের প্লবতা এর আশেপাশের অঞ্চলের প্রবাহীর তুলনায় বেড়ে যায়। তখন শীতলতর ও কম ঘন প্রবাহী, উষ্ণ ও ঘন প্রবাহীর নিম্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেয় এবং একে উপরের দিকে উঠার জন্য বল প্রয়োগ করে। গতীয় এ প্রক্রিয়াকেই বলে convection এবং চলমান প্রবাহী পদার্থটিকে বলে convection cell.

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হচ্ছেন জোবাইদা, শামিলা ও তাবিথ আউয়াল Apr 30, 2025
img
ফলোয়ার কমে যাওয়ায় আত্মঘাতী মিশা আগরওয়াল Apr 30, 2025
img
ফেসবুকে ১০০’র বেশি ভুয়া পেজে চলছে ওষুধ বিক্রি, বিব্রত ডা. জাহাঙ্গীর Apr 30, 2025
img
কেএমপি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি বিএনপির, দাবি পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিচার Apr 30, 2025
img
ববি প্রশাসনের প্রতীকী জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত Apr 30, 2025
img
আ. লীগ শুধু ভোটাধিকার হরণ করেনি, ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে: হাসনাত Apr 30, 2025
img
ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ০.৩% সংকুচিত Apr 30, 2025
img
'আলজেরিয়ার সঙ্গে দ্রুত পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করা হবে' Apr 30, 2025
img
সিদ্দিক সুশীল ভূমিকায় আন্দোলনের সময় যা খুশি করেছেন: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী Apr 30, 2025
img
আসছে নতুন নোট, থাকছে ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’ Apr 30, 2025