ই-সিগারেটের আমদানি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অংশীজনদের স্মারকলিপি

ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টরা। এতে সরকারের ই-সিগারেট ও ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। এই সিদ্ধান্তের আওতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ই-সিগারেট বা ইএনডিএসকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীরা কম ক্ষতিকর ও ধূমপান বন্ধে সহায়ক একটি বিকল্প হারাবেন বলে মনে করছেন অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টরা। ফলে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে, এমন আশঙ্কা তাদের।

আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ স্মারকলিপি জমা দেয় ভেপ ব্যবহারকারীদের সংগঠন ভয়েস অব ভেপারস, কনজুমার রাইটস অব সেলস অলটারনেটিভস (কোরসা) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা) । এর আগে রাজধানীর শাহবাগে 'উন্নত দেশগুলো ই-সিগারেটকে নিরাপদ বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে, তাহলে কেন বাংলাদেশে এই অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা?’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি করেন তারা। এসময় সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে সুমন জামান, আনিসুজ্জামান খান, রেজওয়ান আহমেদ, ইফতেখায়রুল আলম, রিয়াজ মাহবুব ও নুরুল আফসারসহ ভোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেন্ডস্টা) সভাপতি সুমন জামান বলেন, ভেপিং বা ই-সিগারেট হলো তামাকের ক্ষতিহ্রাস পণ্য। অর্থাৎ, ধূমপানের ক্ষতির মাত্রা কমানোর জন্যই মূলত এর উৎপত্তি। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি এসব পণ্য প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও সুইডেন জনস্বাস্থ্য নীতির অংশ হিসেবে এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। তাই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে বর্তমানে যারা ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন, তারা আবার প্রচলিত সিগারেটের দিকে ঝুঁকতে পারেন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করলেই এর ব্যবহার বন্ধ হয় না। বরং আইনসম্মত পথ বন্ধ করলে গড়ে ওঠে কালো বাজার। ভারতে ২০১৯ সালে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার পর অবৈধভাবে এই পণ্য বিক্রির হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও জবাবদিহিতা না থাকায় ব্যবহারকারীরা ঝুঁকির মুখে পড়েন। পাশাপাশি, সরকারও হারিয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

এছাড়াও কনজুমার রাইটস অব সেলস অলটারনেটিভস (কোরসা) এর পরিচালক ইফতেখায়রুল আলাম বলেন, ‘এ খাতে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িত। পাশাপাশি ৫ লাখ ব্যবহারকারী আছেন, যারা ইতোমধ্যে ভেপিং এর মাধ্যমে ধূমপান ছেড়েছেন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এসব মানুষ। তাদের অধিকার আছে ধূমপান বন্ধে কম ক্ষতিকর বিকল্প বেছে নেওয়ার। ছাত্র-জনতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার নিয়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই সরকার ক্ষতিহ্রাস পণ্য ব্যবহারকারী ও এ খাতে জড়িতদের প্রতি বৈষম্যমূলক এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করি।

সংগঠনটিগুলোর দাবি, ই-সিগারেটের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসংগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে একদিকে জনস্বাস্থ্য লক্ষ্য অর্জন করা যাবে, অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের জন্য নিরাপদ বিকল্প নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সংগঠনটি একটি সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করতে সরকার ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। ধূমপান রোধে বিভিন্ন দেশে প্রমাণিত তামাকের ক্ষতিহ্রাস কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

মানববন্ধন শেষে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে চার দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়-

১. ENDS পণ্যগুলোর আমদানি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে এই পণ্যগুলোর নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন।

২. স্টেকহোল্ডারদের (ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, ব্যবহারকারী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ) সঙ্গে আলোচনা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি কাঠামো তৈরি করা।

৩. পণ্য আমদানি, মান নিয়ন্ত্রণ এবং লাইসেন্সিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী প্রণয়ন করা, যাতে নিম্নমানের এবং অবৈধ পণ্য বাজারে প্রবেশ করতে না পারে।

৪. অপ্রাপ্তবয়স্কদের কর্তৃক ক্রয়-প্রবেশ প্রতিরোধে কঠোর বয়সসীমা প্রয়োগ করা। বয়সসীমা লঙ্ঘন হলে কঠোর আইন প্রণয়ন করা।

Share this news on:

সর্বশেষ

img

মানবতাবিরোধী অপরাধ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Nov 12, 2025
img
২০২৬ বিশ্বকাপ আমার শেষ বিশ্বকাপ : রোনালদো Nov 12, 2025
img
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না: প্রিন্স Nov 12, 2025
img
গণভোট না হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ২৯ সালে : আযাদ Nov 12, 2025
img
ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল যুদ্ধজাহাজবহর মোতায়েন Nov 12, 2025
img
ঢাকায় শীতের অনুভূতি, তাপমাত্রা নেমেছে ২০ ডিগ্রিতে Nov 12, 2025
img
এক রাতের বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ল সেতু, বিপাকে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ Nov 12, 2025
img
আজারবাইজান সীমান্তে আছড়ে পড়লো তুরস্কের সামরিক বিমান Nov 12, 2025
img
নেতানিয়াহু’র দেশকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধের দাবিতে উয়েফাকে ৭০ ক্রীড়াবিদের চিঠি Nov 12, 2025
img
বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ Nov 12, 2025
img
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬ হাজার ফিলিস্তিনির অঙ্গচ্ছেদ, শিশু এক-চতুর্থাংশ Nov 12, 2025
img
আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ আছে: আবু হানিফ Nov 12, 2025
img
পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা নামল ১২ ডিগ্রিতে Nov 12, 2025
img
বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান ৩য় Nov 12, 2025
img

গোলাম মাওলা রনি

নো হাংকি-পাংকি! বাঁকা আঙুলে ঘি তোলার হুমকি! Nov 12, 2025
img
আজ দুপুরে হাইকোর্টের ২২ বিচারপতির শপথ গ্রহণ Nov 12, 2025
img
২০২৬ সালে হজ করতে পারবেন ৭৮৫০০ বাংলাদেশি Nov 12, 2025
img
১২ নভেম্বর: ইতিহাসে এই দিনে আলোচিত ঘটনা Nov 12, 2025
img
পেটের চর্বি কমায় আদার রস Nov 12, 2025
img
সুখবর পেল আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে Nov 12, 2025