বৈরী অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও রবির আর্থিক সফলতা

চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও  দক্ষতা এবং কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে রবি।

২০২৪ সাল ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বাজার বিশৃঙ্খলার বছর, যা প্রভাব ফেলেছে গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর। এরপরও ৯ হাজার ৯৫০ দশমিক ২ কোটি টাকা রাজস্ব নিয়ে রবি বছর শেষ করেছে, যা আগের বছরের (২০২৩) তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ বেশি। এছাড়া ২০২৩ সালের তুলনায় ভয়েস রাজস্ব দশমিক ৭ শতাংশ এবং ডাটা রাজস্ব ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। 

২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ভয়েস রাজস্ব ৮ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে, তবে ডাটা রাজস্ব মাত্র দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। 
২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৪ সালের একই প্রান্তিকে ভয়েস রাজস্ব ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, ডাটা রাজস্ব ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর প্রধান কারণ ছিল তুমুল বাজার প্রতিযোগিতার মুখে ডাটা মূল্যের নিম্নগামিতা ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে গ্রাহকের ব্যয় সংকোচনের প্রবণতা। 

এর সঙ্গে নতুন সিম কর ২শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩শ’ টাকা করায় নতুন গ্রাহক প্রাপ্তিতে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। প্রতিযোগীরা নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে আগ্রাসী ভর্তুকি নীতি গ্রহণ করায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে; আর এই ঘনীভূত অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে রবির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ কমেছে ।

২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রবির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখে। একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১ লাখ কমে হয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ। তবে ফোরজি ব্যবহারকারী সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫ লাখের বেশি বেড়েছে।

২০২৪ সালের শেষে রবির সক্রিয় গ্রাহকদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল ফোরজি ব্যবহারকারী। সারা দেশে ১৮ হাজারের বেশি ফোরজি টাওয়ার স্থাপন করে রবি ৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ জনসংখ্যার জন্য ফোরজি কাভারেজ নিশ্চিত করেছে।

২০২৪ সালে রবির পারফরম্যান্সের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এর ইবিআইটিডিএ আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বেড়ে ৫ হাজার ৮১ দশমিক ৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ইবিআইটিডিএ মার্জিন ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৫১ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ ৩ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পেলেও, বার্ষিক তুলনার হিসেবে এটি দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি ৪৪৬ কোটি ১০ লাখ টাকা মূলধনী বিনিয়োগ করেছে, ফলে সারা বছরের মোট মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। ২০২৪ সালে সরকারি কোষাগারে মোট ৬ হাজার ২৮৭ দশমিক ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে রবি, যা মোট রাজস্বের ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। শুধু চতুর্থ প্রান্তিকেই রাজস্বের ৭০ শতাংশ সরকারকে পরিশোধ করেছে অপারেটরটি।  

২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে কর পরবর্তী মুনাফার (পিএটি) পরিমাণ ২৯৯ দশমিক ৯ কোটি টাকা, ফলে বছরের মোট পিএটি’র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৩ কোটি টাকায়। ২০২৪ সালে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ১ দশমিক ৩৪ টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১৯ শতাংশ বেশি। 

শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২৪) ইপিএস আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বার্ষিক ভিত্তিতে (২০২৩ সালের তুলনায়) বৃদ্ধি পেয়েছে ১০২ শতাংশ।  

রবির পরিচালনা পর্ষদ প্রতি শেয়ার ১.৫০ টাকা হারে ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে, যা ২০২৪ সালের কর পরবর্তী মুনাফার ১১১ দশমিক ৮ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় গৃহীত হয়। রবির ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২১ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।

রবির ভারপ্রাপ্ত সিইও এম. রিয়াজ রাশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে কাজ করা। আমরা একটি পরিবর্তনশীল বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি; পরিচালনগত দক্ষতা ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছি আমরা। নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও কর নীতি এমন হওয়া উচিত যাতে সুষম ও প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম খাত নিশ্চিত হয় এবং রবি’র মতো অপারেটররা এগোনোর সুযোগ পায়।” 

গ্রাহক স্বার্থে টেলিকম খাতকে সুসংগঠিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এম. রিয়াজ রাশিদ। সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ এবং সিম কর বাড়ানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, এতে ডিজিটাল জীবনধারার বিকাশ এবং মানসম্মত ডিজিটাল সেবার ব্যবহার ও প্রসার বাধাগ্রস্থ হবে।

সামষ্টিক অর্থনীতির অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও রবি শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য প্রদান, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং টেকসই টেলিযোগাযোগ শিল্পের উপযোগী নীতি নির্ধারণে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রবি।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ডিফেন্স সার্ভিসেস প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনীর বৈঠক Sep 09, 2025
img

এলডিপি মহাসচিব

জুলাই সনদ সংবিধান থেকে বড় নয় Sep 09, 2025
img
ডাকসুর ভোট গণনায় ১৪ মেশিন, ঘণ্টায় গোনা যাবে ৮০০-১৩০০ ব্যালট Sep 09, 2025
img
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আসিফ নজরুলের ফেসবুক পোস্ট Sep 09, 2025
img

চরমোনাই পীর

ডাকসুর মাধ্যমে আগামী রাজনীতির যাত্রাপথ স্পষ্ট হবে Sep 09, 2025
img

তাজনূভা জাবীন

ডাকসু নির্বাচনে তারাই জিতবে, যারা মেয়েদের ভোট বেশি পাবে Sep 09, 2025
img
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাষ্ট্র আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন : এসপি তারিকুল Sep 09, 2025
img
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে নতুন ডিজি Sep 08, 2025
img
ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের অনেক প্রশ্নের মীমাংসা প্রয়োজন : হাদি Sep 08, 2025
img
সকল সাংবাদিকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়: তথ্য উপদেষ্টা Sep 08, 2025
img
বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে মেসির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: স্ক্যালোনি Sep 08, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানের পরে নিজেরাই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে: শামসুজ্জামান দুদু Sep 08, 2025
img
ধারাভাষ্যকার আতহারকে ঘিরে বিভ্রান্তি: বিদেশি মিডিয়ায় ভিন্ন তথ্য! Sep 08, 2025
img
পঞ্চগড়ে সারজিস আলমের বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন Sep 08, 2025
ফুসফুস সমস্যায় আরশ খান, জানালেন অভিনেতা! Sep 08, 2025
img
দিল্লিতে বৃষ্টি পড়লে বাংলাদেশ ছাতা ধরত : চরমোনাই পীর Sep 08, 2025
img
নাটকীয় গোলে ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিলো তিউনিসিয়া Sep 08, 2025
img
রাত পোহালেই ঢাবিতে ডাকসু ভোট শুরু, ৩৪ ঘণ্টা সীমিত থাকবে চলাচল Sep 08, 2025
img
আইডি অ্যাক্টিভ করেই ঢাবি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বার্তা সাদিক কায়েমের! Sep 08, 2025
img
ভারত-নেপাল সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা জারি Sep 08, 2025