রোজায় নিত্যপণ্য সংকটের আশঙ্কা নেই

পবিত্র মাহে রমজান ঘিরে রেকর্ড নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময়ের বাড়তি চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের বিপুল মজুদ নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। ফলে রোজায় অতিমুনাফালোভী চক্র যেভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে, এবার এ আশঙ্কা নেই; বরং দাম আরো কমতে পারে। তথ্য-উপাত্ত এবং ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা এমন আভাসই দিচ্ছেন।

তবে পর্যাপ্ত আমদানির মধ্যেও চোখ রাঙাচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। বাজারে এ পণ্যটির সংকট এখনো কাটেনি। হাতেগোনা দু-একটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল সংকটে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেলও। ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকটের কারণে ভোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই সংকট চলতে থাকলে রোজায় এটি ভোক্তাদের বাড়তি উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯টি ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। আর চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন। গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ছোলা আমদানি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, খেজুর ২৩ শতাংশ, চিনি ২০ শতাংশ, ডালজাতীয় পণ্য ৪৪ শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ ও আদা আমদানি ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তবর্তী সরকার। আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোজ্যতেল ছাড়া সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। পেঁয়াজ, চিনি ও ডালসহ বেশ কিছু পণ্যের দামও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। খোলা চিনি কেজি ১২০ টাকায়, প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকায়, ছোলা ১০৫ থেকে ১১০, দেশি পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫, দেশি মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫, মোটা মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দেশি নতুন রসুন চলে আসায় অনেকটা কম দামে রসুন কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে আমদানীকৃত রসুন এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। দেশি নতুন রসুন কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় ও আমদানীকৃত রসুন কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স হাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. কামাল গাজী বলেন, ‘এবার সব পণ্যের দাম কম আছে। অন্যান্য বছর রোজার আগে আগে হঠাৎ করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেত, এবার সেটা নেই। কারণ এবার বাজারে কোনো ঘাটতি নেই। শুধু সয়াবিন তেল নিয়ে কিছুটা ঝামেলা চলছে। কোম্পানিগুলো চাহিদামতো তেল দিচ্ছে না। চাহিদা ১০ কার্টনের, কম্পানিগুলো দিচ্ছে এক কার্টন।’ তিনি বলেন, গত বছর রোজায় বুটের বেসন কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এবার অ্যাংকরের বেসন কেজি ৯০ টাকায় ও বুটের বেসন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইসবগুলের ভুসি কেজি ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর রোজায় ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।’ 

রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত ২৩ জানুয়ারি এবং ২৩ ফেব্রুয়ারির বাজার দরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে ছোলা কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ১০৫ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, দেশি আদা কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৫ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডাল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি মসুর ডাল কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় এবং চিনি কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভোটের প্রচারণায় প্রথমবারের মতো পোস্টার ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ Nov 11, 2025
img
পিছিয়ে গেল বিপিএলের নিলাম Nov 11, 2025
img
ক্ষুদে ফুটবলার সোহানকে বিকেএসপি স্কলারশিপ দেয়া হবে : ক্রীড়া উপদেষ্টা Nov 11, 2025
img
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ, একজনকে গণপিটুনি Nov 11, 2025
img
প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা এবং সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট Nov 11, 2025
“ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা থেকে নায়ক হয়েছি Nov 10, 2025
আসিফের উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া, বললেন মামুনুল Nov 10, 2025
img
গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রেম চোপড়া Nov 10, 2025
img
‘রাষ্ট্র যেখানে ব্যর্থ, রাজপথই সেখানে ফয়সালা’ Nov 10, 2025
img
নারীরা ঘরে সময় দিলে, সম্মানিত করবে সরকার: জামায়াত আমির Nov 10, 2025
img
জারিনের স্মরণ সভায় গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে জিতেন্দ্র Nov 10, 2025
img
দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ Nov 10, 2025
img
বদলে যাচ্ছে বিপিএল নিলামের তারিখ Nov 10, 2025
img
মুশফিকের ৯৯তম টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ Nov 10, 2025
img
পরিস্থিতির কারণে শাকিবের সঙ্গে বিয়ের কথা গোপন রাখা হয়েছিল, জানালেন অপু বিশ্বাস Nov 10, 2025
img
প্লট-ফ্ল্যাট হস্তান্তরে লাগবে না কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি Nov 10, 2025
রাবি রেজিস্ট্রার অফিসে বিএনপির সভার অভিযোগ Nov 10, 2025
''জুলাইকে শুধুমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তন হিসেবে দেখতে চাইনা'' Nov 10, 2025
পুলিশের দাবি ঢাকায় গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী Nov 10, 2025
img
এনসিপি জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ Nov 10, 2025