'প্ল্যান্ট ব্লাইন্ডনেস'-প্রকৃতির প্রতিশোধ

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা নিত্য-নতুন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি। জেনে কিংবা না জেনে উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন করছি। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে আবহাওয়া-প্রকৃতিতে। আর পরোক্ষভাবে মানব স্বাস্থ্য শিকার হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতির। বিজ্ঞানীরা এ অবস্থার নাম দিয়েছেন 'প্ল্যান্ট ব্লাইন্ডনেস'। মূলত প্লান্ট ব্লাইন্ডনেস বলতে আমাদের চারপাশে যেসব উদ্ভিদ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আমাদের যে অবমূল্যায়ন প্রবণতা রয়েছে তাকে বুঝায়। এই ব্লাইন্ডনেস বা অন্ধত্ব পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

আপনি সর্বশেষ কোন প্রাণীটি দেখেছিলেন? আপনার কি ঐ প্রাণীটির রং, আকার-আকৃতি মনে আছে? আপনি কি অন্য প্রাণী থেকে সেটিকে আলাদা করতে পারবেন? 

অথবা যদি বলা হয় আপনার দেখা সর্বশেষ গাছ কোনটি?

প্রাণীর ক্ষেত্রে আপনার মানসিক চিত্রটি যদি গাছের তুলনায় তীক্ষ্ণ হয়, তবে এমন আপনি একা নন। গাছের জীবন আছে - এটি বুঝতে পারার আগেই শিশুরা প্রাণীর জীবন আছে - তা বুঝতে পারে। স্মৃতি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা গাছের ছবির চেয়ে প্রাণীর ছবি ভালভাবে মনে রাখতে পারে। যেমন - 'এটেনশনাল ব্লিঙ্ক' নামক যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষায় গাছপালা, প্রাণী ও অসম্পর্কিত বস্তু ব্যবহার করা হয়েছে যা দ্বারা অল্প সময়ের মধ্যে দেখানো দুইটি ছবি পৃথকভাবে দেখতে পারার ক্ষমতাকে বুঝায়। এই গবেষণায় দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীরা গাছের চেয়ে প্রাণীর ছবি ভালভাবে চিনতে পেরেছেন। 

এই প্রবণতা এতই বেশি যে ১৯৯৮ সালে দুইজন আমেরিকান উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞান শিক্ষক এলিজাবেথ শুসলার এবং জেমস্ ওয়ান্ডারসি একটি নতুন নাম উদ্ভাবন করেন - 'প্ল্যান্ট ব্লাইন্ডনেস'। তারা এটিকে বলেছেন- ‘প্রকৃতিতে কারো গাছপালা দেখতে পাবার অক্ষমতা’। 

প্ল্যান্ট ব্লাইন্ডনেস স্বাভাবিকভাবেই উদ্ভিদের অবমূল্যায়ন ঘটায় এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণের প্রতি আমাদের উদাসীন করে তোলে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠদান দুনিয়াজুড়ে উদ্বেগজনকভাবে কমছে এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জন্য সরকারী অনুদানও কমছে। প্ল্যান্ট ব্লাইন্ডনেসের মাত্রা এবং সময়ের সাথে এর পরিবর্তনের উপর গবেষণা না করার দরুণ অধিক নগরায়ণ ও যন্ত্রের সাথে সময় কাটানোর কারণে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা ব্যাধি বাড়ছে। সেই সাথে উদ্ভিদের প্রতি কম মনোযোগ দেওয়ায় প্ল্যান্ট ব্লাইন্ডনেস বাড়ছে। শুসলারের মতে, ‘মানুষ যা আগে থেকে জানে, শুধুমাত্র সেটাই চিনতে পারে।’ 

এটি গোলমেলে। উদ্ভিদ সংরক্ষণ পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানব স্বাস্থ্যের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। 

উন্নত জাতের খাদ্যশস্য থেকে অধিক কার্যকর ঔষধ, উদ্ভিদ গবেষণা বহু যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অংশ। ২৮,০০০ এরও অধিক উদ্ভিদ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে আছে উদ্ভিদজাত ক্যান্সার প্রতিষেধক ঔষধ ও রক্ত মৃদুকারক। 

উদ্ভিদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে,উদ্ভিদের পরীক্ষাগুলি পশু পরীক্ষার কিছু প্রকারের উপর একটি নৈতিক প্রভাব ফেলে। জিনোম সম্পাদনার মত এলাকার বহুমুখী কৌশল উদ্ভিদের সাহায্যে পরিমার্জিত করা যেতে পারে যা প্রজনন ও নিয়ন্ত্রণে সহজ এবং সস্তা। উদাহরণস্বরূপ, জীববিজ্ঞানের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ফুলিং উদ্ভিদ, আরিবিডোপিসের জিনোম ক্রমসেনসিং শুধুমাত্র উদ্ভিদ জেনেটিক্স নয়, তবে সাধারণভাবে জিনোমের ক্রমানুসারে এটি একটি ল্যান্ডমার্ক ছিল।

প্রকৃতপক্ষে, উইলিয়ামের গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্যও উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতির সংরক্ষণ জরুরি। কেননা উদ্ভিদের সংরক্ষণ মানেই প্রাণীর সংরক্ষণ। এ গবেষক আশা করেন উদ্ভিদের প্রতি মানুষের সমর্মিতা বাড়বে। তার মতে, ‘ এটা মোটেও অসম্ভব নয়’।

বিশ্বব্যা্পী জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মিঠা পানির সংকট, কৃষি ভূমি হ্রাস, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর কারণে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ আগের চেয়ে বেশি প্রতিকূলতার মুখোমুখি। জৈব জ্বালানি গবেষণার মাধ্যমে, উদ্ভিদ নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাব্য উৎস হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে হলো,আমাদের সবুজ বান্ধব হতে হবে। আমাদের ভবিষ্যতের জন্যই নতুন নতুন উদ্ভাবন শিখতে হবে। যাতে সবুজের সুরক্ষা হয়।

 

ইন্টারনেট অবলম্বনে লিখেছেন: সওগাত আশরাফ খান।

 

টাইমস/এমএস

 

Share this news on: