নির্মাণ শিল্প ক্ষতির মুখে, কার্যকরী পদক্ষেপের আহ্বান


দেশের ভৌত অবকাঠামোর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের নির্মাণকাজ ক্ষতির এখন ক্ষতির মুখে। নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হাউজিং, সিমেন্ট, স্টিল, বালু, সিরামিক, হার্ডওয়্যারসহ শতাধিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আহ্বান জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) ও বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) নির্মাণ খাতে এগিয়ে আসতে শুল্ক-কর কমানোর আহ্বান জানায়।

সিমেন্টের মূল উপকরণ ক্লিংকারের কাস্টমস ডিউটি (সিডি) প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে গত বাজেটে ৭০০ টাকা করা হয়েছিল। এতে প্রধান কাঁচামাল আমদানিতে সিডির পরিমাণ দাঁড়ায় আমদানি মূল্যের প্রায় ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) মনে করে, এর ফলে সিমেন্টের বাজারেভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে ও নির্মাণ কার্যক্রম গতি হারাচ্ছে। তাই ক্লিংকারের সিডি ২০০ টাকা করার দাবি সংগঠনটির।

নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপকরণ স্টিল। দেশে লোহার খনি না থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয় পণ্যটি। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) তথ্য অনুযায়ী, সরকারকে রাজস্ব দিয়ে শিল্প কারখানার ৯৫ শতাংশ ও অবকাঠামো শিল্পের শতভাগ কাঁচামাল আমদানি করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে খাতটি। তাই এই খাতের বিকাশে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএসএমএ। এছাড়া আমদানি শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব সংগঠনটির। বাংলাদেশের প্রযুক্তিনির্ভর ও সম্ভাবনাময় ওষুধ শিল্প নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে।

দেশে উৎপাদনের ফলে ওষুধ আমদানির প্রয়োজন না হওয়া বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু জরুরি জীবন রক্ষাকারী পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপিত আছে। এই হার কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি।
এছাড়া অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান সংশোধন, বিএনটিআইর বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকা থেকে অব্যাহতি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে তারা।

অধ্যাদেশ জারি করে জানুয়ারিতে বাড়ানো হয় সব ধরনের সিগারেটের দাম ও শুল্ক। সিগারেট কোম্পানিগুলোর দাবি, দাম বেড়ে যাওয়ায় কমেছে উৎপাদন, বেড়েছে চোরাচালান। লোকসান গুণছে কোম্পানি। এ অবস্থায় নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম ৫ টাকা কমানোর দাবি জানান তারা। পাশাপাশি আসছে বাজেটে সিগারেটে কর আর না বাড়ানোর দাবিও জানান তারা।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) তাদের প্রস্তাবে দ্বৈতকর এড়ানো, সব সরকারি সংস্থায় রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট করা, করপোরেট করহার যৌক্তিক করা, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ তুলে দেওয়া, ন্যূনতম কর সমন্বয়, টেলিকম মেশিনারি, ইকুইপমেন্ট ও সফটওয়্যারের জন্য পৃথক এইচএস কোডের দাবি জানায়।

বর্তমানে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ৩ শতাংশ ন্যূনতম কর আরোপিত আছে। যা কমিয়ে ০.৬ শতাংশ করার আহ্বান খাত সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া এ খাতে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ ও মিনারেল ওয়াটারে সম্পূর্ণ শুল্ক অব্যাহতির দাবি জানানো হয়।
বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি শোনেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। এসময় তিনি বলেন, ব্যবসার বাধা তৈরি করে ও খরচ বাড়ায় এমন বিধান সংশোধন করা হবে। কমিয়ে আনা হবে উৎসে করের চাপ। আমরা ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, এখন অনেকক্ষেত্রে করের হার অনেক বেশি। আমরা এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে চাই।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে আপনারা এর একটি প্রতিফলন দেখতে পাবেন।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান ছাড়াও আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের নীতি শাখার সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে জাকার্তা, ঢাকা অবস্থান ১৫তম Aug 25, 2025
img
দাবার গুটি উল্টে যাচ্ছে, মিত্র হারিয়ে কোণঠাসা নেতানিয়াহু! Aug 25, 2025
img
গাজায় প্রাণ হারাল আরও ৫১, মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ গেল ২৪ জনের Aug 25, 2025
img
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সজীব গ্রেপ্তার Aug 25, 2025
img
ইসরায়েলের হামলায় গাজা সিটির এক হাজারেরও বেশি ভবন ধ্বংস Aug 25, 2025
img
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহসভাপতি নিশাদ বহিষ্কার Aug 25, 2025
img
অমৎস্যজীবীদের জলাশয় ইজারা দেওয়া যাবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা Aug 25, 2025
img
মাগুরায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের Aug 25, 2025
img
প্রায় দুই দশক পর পর্দায় একসঙ্গে অক্ষয় ও সাইফ Aug 25, 2025
img
২১ বার অস্ত্রোপচার শেষে ঘরে ফিরলেন মাইলস্টোনের শিক্ষক নিশি আক্তার Aug 25, 2025
img
পিআর নিয়ে এত ভয় কেন, আসেন ডিবেট করি: তাহের Aug 25, 2025
img
জনগণের সমস্যার সমাধানই আমার অঙ্গীকার : আমিনুল হক Aug 25, 2025
img
“পুরো শরীর প্লাস্টিকের?” নেটিজেনদের কটাক্ষে মৌনী রায়ের পাল্টা জবাব Aug 25, 2025
img
কিশোরগঞ্জে ফজলুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ছবিতে জুতা নিক্ষেপ Aug 25, 2025
img
নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করবে Aug 25, 2025
img
রুমিন ফারহানার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ Aug 25, 2025
img
ফজলুর রহমানকে নিয়ে ৯৭ সংগঠনের যৌথ বিবৃতি Aug 25, 2025
img
পর্যটন ভিসা ফি ১৩৫ শতাংশ বাড়ালো যুক্তরাষ্ট্র Aug 25, 2025
img
হেফাজত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতারা Aug 25, 2025
img
প্রেমের টানে কুষ্টিয়ায় এসে চীনা যুবকের বিয়ে Aug 25, 2025