কাশ্মীরে লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ভিম্বার জেলার মানাওয়ার সেক্টরে আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (২৯ তারিখ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ট্রিবিউন ডটকম পিকে।
কোয়াডকপ্টার হচ্ছে একটি ধরনের মানববিহীন উড়ন্ত যান বা ড্রোন, যার চারটি ঘূর্ণায়মান প্রপেলারের সাহায্যে এটি আকাশে উড়ে এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সামরিক ক্ষেত্রে, কোয়াডকপ্টার প্রায়ই গোপন নজরদারি, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমনটা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে ভারতীয় কোয়াডকপ্টারটি করছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, কোয়াডকপ্টারটি নজরদারি কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছিল। ঠিক সেই সময় সতর্ক অবস্থানে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেটিকে গুলি করে নামিয়ে দেয়। তারা বলছেন, এই সময়োপযোগী পদক্ষেপ সীমান্ত অতিক্রম করে গুপ্তচরবৃত্তির একটি প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সীমান্তে যেকোনো আগ্রাসী তৎপরতার জবাব দিতে সর্বদা প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন কর্মকর্তারা।
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক উত্তেজনা। গত ২২ এপ্রিল ভারত-অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এটিকে অঞ্চলটিতে ২০০০ সালের পর অন্যতম ভয়াবহ হামলা।
এ হামলার পরদিনই, ২৩ এপ্রিল, ভারত একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করে, যা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং বহু যুদ্ধ-সংঘাতের মধ্যেও স্থায়ী ছিল।
পরদিন পাকিস্তানও কড়া জবাব দেয়। ইসলামাবাদ হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, তারা ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করতে পারে এবং ভারতের জন্য আকাশসীমাও বন্ধ করে দিতে পারে।
ভারত পহেলগাম হামলার পেছনে সীমান্তপারের সংযোগ থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্যদিকে পাকিস্তান এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সত্য উদঘাটিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করার ঘটনাকে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আরেকটি নজির হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
আরআর/এসএন