বার্সা-ইন্টার ম্যাচে ৬ গোলের উৎসব!

ইন্টার মিলান চলতি মৌসুমে ইউরোপে সবচেয়ে কম গোল খাওয়া দল। বার্সেলোনা চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল দেয়া দল। দুই বিপরীত ধারার দল স্পেনের বার্সেলোনায় মিলেছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল প্রথম লেগে।

এমন এক ম্যাচে যেমন উত্তাপ অনুভব করেছিল সবাই সেটাই হলো। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বার্সেলোনার দারুণ পরীক্ষা নিয়েছে ইন্টার মিলান। আবার ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ফিরে এসে ম্যাচে সমতা টেনেছে বার্সেলোনা। ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুই হেভিওয়েট ক্লাবের ম্যাচটা ড্র হয়েছে ৩-৩ গোলে।

ইতালিয়ান ফুটবলে রক্ষণটাই বড় শক্তি। কাতেনাচ্চিও নামের জমাট রক্ষণের ওই ট্যাকটিক্স ইতালিকে একসময় ফুটবল বিশ্বের রাজত্ব এনে দিয়েছিল। ফিলিপে ইনজাঘি নিজে স্ট্রাইকার হলেও দলকে কাতেনাচ্চিও দর্শন শিখিয়েছেন ভালোভাবেই। প্রথমার্ধের অনেকটা সময় ইন্টার এগিয়ে ছিল ওই রক্ষণের সুবাদেই। তবে সুযোগ বুঝে গোল আদায় করতেই দেরি হয়নি তাদের।

ম্যাচের বয়স যখন ৩০ সেকেন্ড, তখনই ইন্টারের প্রথম গোল আসে মার্কাস থুরামের চমৎকার এক ব্যাকহিল থেকে। বার্সার হাই লাইন ডিফেন্স শুরুতেই আক্রমণ করতে গিয়ে হোঁচট খায়। ডেনজেল দামফ্রিসের ক্রস প্রথম দফায় ব্যর্থ হলেও পরেরবার ঠিকই চলে যায় বার্সা বক্সে। ব্যাকহিল থেকে গোল আদায় করেন থুরাম।

গোল হজম করে খানিক মরিয়াই ছিল বার্সা। লামিনে ইয়ামাল, রাফিনিয়া একক নৈপুণ্যে দলের স্কোরশিট খুলতে চেয়েছিলেন। ফেরান তরেস মিস করেছেন খুব কাছ থেকে। স্বাগতিক বার্সা তখন হতাশায় ডুবছে।

সেটা আরো বাড়ালেন দামফ্রিস। ২০ মিনিটে কর্নার থেকে নিকোলাস বারেল্লার হেড পাসে দারুণ একটা ভলি। ইন্টার মিলান এগিয়ে যায় ২-০ গোলে।

কিন্তু বিপরীতে থাকা দলটা যে বার্সেলোনা। চলতি মৌসুমে যারা এখন পর্যন্ত করেছে ৮৯ গোল। মৌসুমের ৯০তম গোলটা তারা পেয়ে গেল এই ম্যাচের ২৪ মিনিটে এসে। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে একক নৈপুণ্যে ইন্টারের বক্সে ঢোকেন লামিনে ইয়ামাল। এরপর খানিক জায়গা বানিয়ে ইন্টারের চার ডিফেন্ডারের মাঝে থেকে গোলমুখে শট। স্কোরলাইন হলো ২-১।

এক গোল পেয়ে বার্সেলোনা নিজেকের আক্রমণের ধার বাড়িয়েছিল। সেটার ফলাফল পেতে সময় লেগেছে ১৪ মিনিট। মাঝে ইয়ামালের শট আঘাত করেছিল ক্রসবারে। আর দানি ওলমোকে হতাশ করেছিলেন ইন্টার গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। অবশ্য ৩৪ মিনিটে আর হয়নি। সংঘবদ্ধ আক্রমণে গোল আদায় করে নেয় বার্সেলোনা।

ডি-বক্সের বাইরে থেকে মাপা ক্রস ছিল পেদ্রির। সেটাকে হেড দিয়ে ফরোয়ার্ড পাসে পরিণত করেন রাফিনিয়া। ফেরান তরেসের একটাই কাজ ছিল। সেটাই করেছেন। আলতো স্পর্শে বল জড়ান জালে। স্কোরলাইন হলো ২-২। এই গোলে অ্যাসিস্ট করে চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০ গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন রাফিনিয়া। ক্লাব রেকর্ডে পেছনে ফেলেছেন লিওনেল মেসিকে।

দ্বিতীয়ার্ধের একেবারেই শুরুতে ইন্টার মিলানই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে। যদিও ধীরে ধীরে ম্যাচের লাগাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বার্সেলোনাই। যদিও গোলটা তারাই পেয়েছে পরে। ইন্টারের তৃতীয় গোলের একমিনিট পরেই বার্সেলোনা আদায় করে নেয় সমতাসূচক ৩য় গোল।

৬৩ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে লাফিয়ে হেড করেন ডেনজেল দামফ্রিস। পরের মিনিটেই কর্নার থেকেই পাওয়া দূরাপ্ললার শটে ম্যাচে ৩-৩ সমতা আনেন রাফিনিয়া।

পুরো ম্যাচে বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও ইন্টার সুযোগ পেলেই তটস্থ রেখেছে বার্সেলোনাকে। কাতালুনিয়ানদের জালে চতুর্থ গোলও করে বসে তারা ৭৫তম মিনিটে। যদিও দামফ্রিসের ক্রসে হেনরি মিখাতারিয়ানের গোলটা হয়েছে বাতিল।

শেষদিকে বার্সেলোনা দুর্দান্ত আক্রমণ করেও অবশ্য আর গোলের দেখা পায়নি। গোলবারও হতাশ করেছে তাদের। শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলের ড্র নিয়েই মাঠ ছেড়েছে দুই দল। উত্তেজনায় ঠাসা এই সেমিফাইনালের বাকি রোমাঞ্চ তোলা রইল সান সিরোর সেকেন্ড লেগের জন্য।

এফপি/টিএ 

Share this news on: