ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা মানেই যে আপনি সুস্থ, কর্মক্ষম ও ভালো অভ্যাসের অধিকারী—এমন প্রচলিত ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন ঘুম গবেষকরা। তাদের মতে, সকালের পাখি বা রাতের প্যাঁচা—এটি আসলে অনেকটাই নির্ধারিত হয় বংশগতির মাধ্যমে।
ঘুমের বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল-এর বিশেষজ্ঞ ডা. রেবেকা রবিন্স জানান, মানুষের দেহের নিজস্ব ঘুম-জাগরণ চক্র বা ‘ক্রোনোটাইপ’ রয়েছে। আর এটাই নির্ধারণ করে, কেউ সকালবেলা চাঙা বোধ করবেন নাকি সন্ধ্যার পর কাজে প্রাণ পাবে।
সকাল না রাত—আপনার টাইপ কোনটা?
ডা. রবিন্স বলেন, “কারও জন্য দিনের শুরুটা হয় সবচেয়ে ফলপ্রসূ সময়। আবার কেউ কেউ দুপুর বা বিকেলের পর জীবনীশক্তি ফিরে পান। এটিই মানুষকে সকালবেলার মানুষ, রাতজাগা মানুষ বা মাঝামাঝি টাইপে ভাগ করে দেয়।”
বেশিরভাগ মানুষই মাঝামাঝি শ্রেণিতে পড়েন—যারা খুব ভোরে উঠতেও পারেন না, আবার গভীর রাত পর্যন্ত জেগেও থাকেন না।
কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকি কী বলছে?
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে জাগতে বেশি অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। কারণ, তাদের ঘুমচক্র প্রাকৃতিক দিনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না—যা মানসিক স্বাস্থ্য, রুটিন এবং শারীরিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে।
তবে ডা. রবিন্সের মতে, “যদি দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার দরকার নেই।”
ঘুমের মানই আসল
যারা রাতের মানুষ, তারা দিনের শব্দ, সূর্যের আলো ইত্যাদি কারণে ঘুমে ব্যাঘাত অনুভব করতে পারেন। এজন্য ঘুমের মান ঠিক রাখতে সন্ধ্যায় কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি:
বই পড়া বা ধ্যান/শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম করা
স্ক্রিন টাইম কমানো
রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা
প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে ঘুমানোর সময় এগিয়ে আনা
সকালে ওঠা দরকার হলে কী করবেন?
যদি কাজ বা জীবনযাত্রার কারণে সকালে উঠতেই হয়, তাহলে ধীরে ধীরে শরীরকে সেই অভ্যাসে আনা জরুরি। ডা. রবিন্স বলেন, “ছোট ছোট পরিবর্তনই দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে।”
তিনি আরও বলেন, “সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ঘুমের সময় কমিয়ে ফেলাটা সঠিক নয়। বরং ঘুমের সময়সূচীতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও মান ঠিক রাখাটাই বেশি জরুরি।”
ঘুম ঠিক রাখলেই ঠিক থাকবে দিন
ঘুমের সময় ও মান নিয়েই নির্ধারিত হয় আমাদের সারাদিনের মেজাজ, মনোযোগ, কর্মক্ষমতা এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যও। তাই রাতজাগা মানুষ হোন বা সকালের পাখি—নিজের দেহের ছন্দ বুঝে ঘুম নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এসএস