লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরে, রাখালিয়া ও হায়দরগঞ্জ বাজারে পণ্য উঠানামা ও ইজারার নামে সড়ক ও মহাসড়কের যানবাহন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ রায়পুর পৌরসভার ইজারাদার বিএনপি নেতা ইব্রাহিম খলিল, রাখালিয়া বাজার অংশের ইজারাদার সোনাপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা বাবুল পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ও হায়দরগঞ্জ বাজারের ইজারাদার স্থানীয় বিএনপি নেতা ইসমাইল হাওলাদারের নেতৃত্বে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ইউএনওকে ব্যবস্থা নিতে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) তোলপাড় চলছে। সোমবার সাংবাদিকসহ সব ইজারাদারদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান খান।
বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চলাচলকারী পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাক, পিকআপ, ট্রলি থেকে রায়পুর শহরে, রাখালিয়া ও হায়দরগঞ্জ বাজার ইজারার টোল আদায় করছে বলে এসব অভিযোগ উঠে।
জানা যায়, উপজেলা প্রশাসন শুধুমাত্র নির্ধারিত হারে রায়পুর প্রধান সড়ক ছাড়া পৌরসভার ১৩টি বাজার ইজারা প্রদান করে। বাজার ইজারা নিয়ে শহর এলাকায় ফলের ট্রাক, মিনিবাস, সিএনজি ও চলাচলের ওপর টোল আদায় করছে বাজার ইজারা কমিটি।
পৌরসভার এসব ইজারা ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছেন পৌরসভার কর নির্ধারক ও পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল পাটোয়ারী। তবে ইকবাল পাটোয়ারী বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, বাজারের বাইরে যানবাহনের ওপর কোনো ধরনের ইজারা প্রদান করা হয় নাই। ইজারার নামে চাঁদাবাজি করে প্রতিদিন লাখ লুটে নিচ্ছে একটি চক্র। এসব অবৈধ চাঁদাবাজিতে জড়িত রয়েছেন রায়পুর পৌরসভার বিএনপির পাঁচ নেতা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোনো প্রকার অনুমতি ও ইজারা না থাকার পরও রশিদ ছাপিয়ে পণ্যবোঝাই যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছে চক্রটি। এ নিয়ে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে গত বছর তৎকালীন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাস ও সাবরীন চৌধুরীও চাঁদাবাজি বন্ধে ইজারাদারকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর ও হায়দরগঞ্জ সড়কের দুই পাশের একাধিক স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও ট্রলি থামিয়ে টোলের নামে টাকা তোলে কয়েকটি গ্রুপ। ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভাগ হয়ে তোলা হয় টাকা। ওই সড়কে চলাচলরত পিকআপ, লরি, পণ্যবোঝাই চলমান ট্রাক থেকে ২০-৫০০ টাকা করে বাজার ইজারার রসিদ দিয়ে টোলের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
শহরের মুড়িহাটা, শহীদ মিনার, পৌরসভার সামনে, ট্রাফিক মোড়সহ কয়েকটি স্থানে, হায়দরগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ড, বালিকা বিদ্যালয়, বাঁশরি সিনেমা হল, রাখালিয়া বাজার সড়কে সামনে তিন শিফটে ৭-৮ জন ২৪ ঘণ্টাই টোলের নামে চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভারদের সঙ্গে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। চাঁদা আদায়ে জন্য সড়কের মাঝখানে চলন্ত গাড়ি থামানোর কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
মো. মালেক ও মো. আউয়াল নামের দুই পিকআপ চালক বলেন, সারাদিন যতবার যাব ততবারই এই চাঁদা দিতে হয়। মালামাল নিয়ে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-রাখালিয়া-হায়দরগঞ্জ গেলেও তারা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি কিস্তিতে গাড়িটা কিনে নিজেই চালাই। এভাবে যদি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চাঁদাবাজি চলে তাহলে আমরা কার কাছে বিচার চাইব।
টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়পুরের ইউএনও ইমরান খান বলেন, আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি পণ্য বা মালবাহী যানবাহন হতে মালামাল লোড-আনলোড ছাড়া অন্যান্য যানবাহন থেকে টোল আদায় করা যাবে না। এর বাইরে যদি কেউ এ ধরনের টোল আদায়ের চেষ্টা করে তাকে ধরে পুলিশে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ইজারাদরের নামে এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান। এসব বিষয়ে সোমবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ব্যাবসায়ীসহ সকল ইজারাদারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পৌর প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সহায়তায় এই চাঁদাবাজির অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। বাজারের বাইরে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইজারাদাররা জানান, ইজারার বাইরে আমরা কোনো টাকা তুলি না। কর্মীকে তুলতেও নিষেধ করা হয়েছে।
রাখালিয়া বাজার বিটের ইজারাদার বাবুল পাটোয়ারী বলেন, আমার নামেই বাজারের ১০ জন ব্যবসায়ী ইজারা নিয়েছি। এখনো নতুন রশিদ তৈরি করিনি। আওয়ামী লীগ আমলের তৈরি করা রশিদ দিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। ছাত্রলীগ কর্মী রুবেলের কাছ থেকে পুরাতন সব রশিদ জব্দ করা হয়েছে।পার্শ্ববর্তী দালালবাজারের ইজারাদার মিজান চৌধুরীও ইজারার নামে পরিবহণ থেকে টাকা তুলছেন।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান খান বলেন, আমরা খবর পেয়েছি রায়পুরের কয়েকটি স্থানে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা হয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
এমআর/টিএ