২৯ মে ঘরোয়া ফুটবলের ২০২৪-২৫ মৌসুম শেষ হচ্ছে। মাঠ ও মাঠের বাইরে নানা ঘটনা ঘটেছে। অথচ এখনো শৃঙ্খলাভঙ্গ জনিত কারণে বাফুফে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি। আর্থিক জরিমানা, সতর্ক, ম্যাচ নিষেধাজ্ঞাবিহীন বিরল এক মৌসুম।
ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম শুরু হয়েছিল ২২ নভেম্বর চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচ দিয়ে। মোহামেডান-কিংসের সেই ম্যাচে স্মোক ফ্লেয়ার ছোড়ার ঘটনায় খেলা ১৩ মিনিট বন্ধ ছিল। ম্যাচ কমিশনার এটি তার রিপোর্টে উল্লেখ করলেও বাফুফে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যেই তিন-চারটি ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচেও স্মোক ফ্লেয়ার ছুড়েছে। মোহামেডানের সমর্থকরা রেফারির সিদ্ধান্তে বেশ উত্তেজিত ছিলেন এর প্রেক্ষিতে খেলা স্থগিত ছিল মিনিট সাতেকের বেশি। পরের সপ্তাহে সেই কুমিল্লাতেই বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে ম্যাচের পর দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। মাঠে ঢুকে সমর্থককেও পুলিশের খেলোয়াড়কে ধাক্কা দিতে দেখা গেছে।
এই সকল ঘটনা ছাপিয়েছে শুক্রবার কিংস অ্যারেনায়। আবাহনী-কিংস লিগের ম্যাচের পর দুই দলের কোচিং স্টাফ-কর্মকর্তারা বাকবিতণ্ডার পর হাতাহাতিতেও জড়ান। আবাহনীর নিবন্ধিত ফুটবলারও কিংস অ্যারেনায় হামলার শিকার হয়েছেন। কিংসের ফুটবলারও ম্যাচ কমিশনারের সাথে বাজে ব্যবহার করেছেন। এই সকল বিষয় ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টে উঠে এসেছে।
ম্যাচ কমিশনারদের মতো রেফারিজ রিপোর্টেও অনেক সময় অনেক বিষয় এসেছে। সেগুলোও আসেনি বিচারের আওতায়। তাই হতাশ হয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেফারি বলেন, 'প্রথম লেগে এক ভেন্যুতে এক ক্লাব কর্মকর্তার সামনে স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার পথে বোতল ছুড়েছিল। এটি রিপোর্টে উল্লেখ করলেও এর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। রিপোর্ট করার পরও যখন ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেয় না ফেডারেশন তখন রেফারিরা রিপোর্ট করার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন।'
ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিদের সম্মানী বকেয়ার রীতি অনেক পুরনো। চলতি মৌসুমে সম্মানী যেমন বকেয়া তেমনি আবার সম্মানহানির ঘটনারও নেই প্রতিকার। ফলে রেফারি-ম্যাচ কমিশনারদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
ঘরোয়া ফুটবলে বিগত মৌসুমগুলোতে প্রতি মাসেই বা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ক্লাব, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ম্যাচ নিষিদ্ধ, আর্থিক জরিমানা, সতর্কের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করত ফুটবল ফেডারেশন। তখন ফুটবলাঙ্গনে অভিযোগ ছিল, ফেডারেশন ক্লাবগুলোর প্রাইজমানি-অংশগ্রহণ ফি কম দেয়ার জন্য এ রকম অতিরিক্ত শাস্তি প্রদান করছে। এবার ঘটছে বিপরীত ঘটনা। চলতি মৌসুমে অনেক ঘটনা ঘটলেও একটিরও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দেখা যায়নি। এই বিষয়ে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেন, 'রেফারি, ম্যাচ কমিশনার রিপোর্টে বিশেষ (শৃঙ্খলা ভঙ্গ/অসঙ্গতি) কিছু থাকলে সেটা কম্পিটিশন বিভাগ ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে প্রেরণ করে থাকে। আবার ডিসিপ্লিনারি কমিটি চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়েও কোনো বিষয় দেখতে পারে।'
রেফারিজ রিপোর্ট বাফুফের রেফারিজ বিভাগ হয়ে কম্পিটিশন বিভাগে যায়। ম্যাচ কমিশনার রিপোর্ট সরাসরি কম্পিটিশন বিভাগই তত্ত্ববধায়ন করে। বাফুফের বেতনভুক্ত স্টাফরা কম্পিটিশন বিভাগে কর্মরত। বাফুফে সচিবালয়ের পক্ষ থেকেই ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে বিভিন্ন ম্যাচের ফাইল উপস্থাপন করেছে বিগত সময়। কম্পিটিশন বিভাগ ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে কোনো ফাইল আদৌ পাঠিয়েছে কি না? কিংবা কেন পাঠায়নি এ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় রয়েছেন ফিফার একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য।
২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ নভেম্বর নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মেজবাহ উদ্দিনকে মনোনয়ন দেয় বাফুফে। তাকে মনোনয়ন দিলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাফুফে এখনো প্রকাশ করেনি। চলতি মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনারই ফাইল ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে যায়নি বলে জানা গেছে একাধিক মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত ডিসিপ্লিনারি কমিটির আনুষ্ঠানিক কোনো সভা হয়নি। ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যানকে আজ সন্ধ্যার দিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রেরণ করেছে বাফুফে সচিবালয়। চলতি সপ্তাহে প্রথম সভা করতে পারে ডিসিপ্লিনারি কমিটি।
নভেম্বরে কিংস অ্যারেনার ঘটনায় মোহামেডান বাফুফেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছিল। লিগের ফিরতি পর্বের ম্যাচের আগে বাফুফে সভাপতিকে আগের ঘটনার বিচার না হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন ক্লাব ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব। এরপরও ফেডারেশনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক শৃঙ্খলা জনিত কোনো সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি। ফুটবলসংশ্লিষ্টদের ধারণা, ২২ নভেম্বরের পরপরই বাফুফে একটি শক্ত পদক্ষেপ নিলে পরবর্তীতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি নাও হতে পারতো।
বাংলাদেশে এখন ফুটবলের সেরা স্টেডিয়াম বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা। চলতি মৌসুমে সেই ভেন্যুই এখন অন্য দলগুলোর জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে আবাহনী-মোহামেডান দুই দলই এবার তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবার পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যানও। তার ভেন্যুতে তার ক্লাবের ম্যাচে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। যা কিংসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এ নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের মন্তব্য, 'আবাহনী-কিংসের ম্যাচের পরের ঘটনার জন্য আমরা দুই জনকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা টিভি ফুটেজ ছাড়াও স্টেডিয়ামের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একটি রিপোর্ট দেবে। আমাদের খেলোয়াড়-কোচিং স্টাফ অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ ধরা পড়লে ক্লাবের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
টিকে/টিএ