ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে মোরগ ও কবুতর চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। এমনকি তাদের মায়েদের নাকে খত দিয়ে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
রোববার (৪ মে) এ নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় একটি দোকানে এ সালিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সালিসের প্রধান ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু।
ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে দেলোয়ার হোসেন দেলুর দলীয় পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ উদ্দিন বাহার ও সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সালিসি বৈঠকে নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণের জন্য দেলুর দলীয় সব পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এবং দুই কিশোরকে মারধর করছেন।
দুই কিশোরের মায়েদেরও নাকে খত দিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে মাথিয়ারা গ্রামের জাহাংগীর আলমের বাড়ি থেকে মোরগ ও কবুতর চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একই গ্রামের দুই কিশোরকে সন্দেহ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই কিশোরকে জাহাংগীরের লোকজন আটক করে মারধর করে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দেলু। রাতেই তাদের বিরুদ্ধে সালিশি বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকে তাদের মায়েদেরও উপস্থিত করা হয়। কয়েকজন বিএনপির নেতার উপস্থিতিতে তাদের বিচার করা হয়।
চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে সকলের সামনে মারধর করা হয়।
তাদের মায়েদের বলা হয়, তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারায় উপস্থিত জনসম্মুখে সকলের কাছে নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। সালিশ বাস্তবায়ন করেন বিএনপির নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু।
দেলু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে দেলু চেয়ারম্যান জানান, ‘আমি জানি এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তবে পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে।’
আইনজীবী রহিমা বেগম বলেন, ‘নারী হিসেবে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এটি আইনত নয়। এর বিচার হওয়া উচিত।’
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে আইনি যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা আমরা করব।’
এসএম