বিনিয়োগের পরিবেশ দেখতে বাংলাদেশ সফরে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিসভার একটি প্রতিনিধিদল। দেশটির এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দুই দেশের মধ্যকার নানা ইস্যুতে আলোচনা করবেন তারা। তবে বন্দর উন্নয়ন, লজিস্টিকস এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ থাকায় এ সফরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ কেমন তা যাচাই করবেন তারা—এমনটা জানা যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এবং ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস সূত্র কালবেলাকে জানায়, আগামীকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদল। দেশটির সহনশীলতা ও সহাবস্থান মন্ত্রী এবং আবুধাবির রাজপরিবারের সদস্য শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান এ সফরে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন। তিনি ছাড়া প্রতিনিধিদলে আরও থাকবেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহমেদ আলি আল সায়েগ এবং বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল রহমান আল হাবি।
আগামীকাল দুপুর আড়াইটার পর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ বিমানে প্রতিনিধিদলটির এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। মূলত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যই সংক্ষিপ্ত এই সফরে আসছেন প্রতিনিধিদলটির সদস্যরা। সফর শেষে এদিন সন্ধ্যায় নিজ দেশে ফিরে যাবেন তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করেন। সেখানে তিনি দেশটির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন তার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই সফরে আসছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিরা। সফরে উভয় পক্ষই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি যাচাই করে দেখবেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় দেশটির পক্ষ থেকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি সে দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে একটি শিল্প পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সফরে বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তর আলোচনা হতে পারে।
আলোচনায় থাকবে সম্ভাব্য যেসব ইস্যু : বাংলাদেশে বন্দর ও লজিস্টিকস নিয়ে বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে আরব আমিরাতের। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে। কনটেইনার ও বহুমুখী টার্মিনাল উন্নয়নে অর্থায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রস্তাবিত ৩টি বে টার্মিনালের মধ্যে একটির উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা দেশের বন্দরগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন এই প্রতিনিধিদলটির সদস্যরা। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাতে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে দেশটি চাইছে বাংলাদেশে একটি বিশেষ শিল্প পার্ক স্থাপন করতে। যেন তাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে একটি ব্যবসায়িক হাবে পরিণত করতে পারে। বাংলাদেশে শিল্প পার্ক স্থাপন করে দেশটির বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে চাইছে। এ নিয়ে নীতিগত অধিকতর আলোচনা হবে বলে জানায় একই সূত্র। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের অভিবাসীদের কাজে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে বরাবরই দুদেশের অভিবাসন খাতকে শক্তিশালী করতে আলোচনা হয়। এবারও দেশটির রাজপরিবারের সদস্যসহ প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে। ঢাকা চাইবে দেশটি যেন আরও কর্মী নেয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশের ভিসা বাতিল করে। আট মাস পর গত রোববার বাংলাদেশে আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল আলহামুদি জানান, বাংলাদেশিদের জন্য ফের দেশটির ভিজিট ভিসা চালু হয়েছে।
আরআর/এসএন