জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবসহ ১৮ দফা সংস্কার রূপরেখা তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন দলটির নেতারা।
দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, “নির্বাহী বিভাগ অতীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় একচ্ছত্র আধিপত্য করেছে। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল সেই জায়গায় জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং সাংবিধানিক পদে নিয়োগের দায়িত্ব পালন করবে।”
তিনি জানান, এনসিপির প্রস্তাবে রয়েছে—ভোটারদের বয়সসীমা ১৬ ও প্রার্থীদের জন্য ২৩ বছর নির্ধারণ, তথ্য অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, ১০০টি আসনে সরাসরি নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধান এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সংবিধানের ৩৩(৩) অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যেন সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্বে না থাকেন এবং দলনেতা, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য যেন একই ব্যক্তি না হন—এসব প্রস্তাবও দিয়েছেন সারজিস আলম।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এনসিপি ‘জুডিশিয়াল কাউন্সিল’, ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ এবং ‘মেধাভিত্তিক বিচারপতি নিয়োগ পরীক্ষার’ কথা বলেছে। হাইকোর্টের বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন এবং প্রধান বিচারপতিকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবও রয়েছে।
দুদকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে সংস্থাটিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে দুদকের অনুমতির বিধান বাতিলের প্রস্তাবও এসেছে।
সারজিস আলম বলেন, “দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বাতিল করা জরুরি। এতে করে জনপ্রিয় ব্যক্তি দলীয় ট্যাগের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়।”
জনপ্রশাসনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘নাগরিক সেবা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। প্রশাসনিক সংস্কারে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’, নির্ধারিত সময়সীমা এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক’ বা ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ গঠন জরুরি। যেন সেই সরকার শুধু নির্বাচনের দায়িত্বে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “গণপরিষদ গঠন করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। দেশের সংবিধান বর্তমানে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে বন্দি।”
এনসিপির মতে, বিচার ও সংস্কারে সরকার আন্তরিক হলে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।
দলটি মনে করে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়ন, আস্থার সংকট নিরসন এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এখন জরুরি।
এসএস/টিএ