প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিতে দশটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিসি) মালয়েশিয়া চ্যাপ্টার।
বুধবার (৭ মে) সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও সহায়তার চেষ্টা করে যাচ্ছে এনসিসি।
প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি, অথচ তাদের অধিকাংশই অপ্রতুল সরকারি সহায়তা ও নানাবিধ সমস্যার মধ্যে দিন পার করছেন। তারই আলোকে প্রবাসীদের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা আরও সুসংহত করতে মালয়েশিয়ায় কর্মরত রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের কল্যাণে কয়েকটি বাস্তব সম্মত প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করেছে সংগঠনটি।
প্রস্তাবনাগুলো হলো—
১. রেমিট্যান্সযোদ্ধার মৃত্যুর পর মরদেহ দেশে পাঠানোর দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে: প্রবাসে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলে বাংলাদেশ হাইকমিশন যেন তার মরদেহ দেশে প্রেরণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। এটি মানবিক দায়িত্ব হিসেবে রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে।
২. বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য ইন্স্যুরেন্স পলিসি চালু করা। যে প্রবাসীরা ব্যাংক বা বৈধপথে আর্থিক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাবেন, তাদের জন্য সরকার একটি ইন্স্যুরেন্স স্কিম চালু করবে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রেরণের বিপরীতে প্রবাসীরা একটি সুরক্ষার আওতায় থাকবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর একটি এককালীন সঞ্চয় পাবেন।
৩. বিমান ভাড়া কমানোর উদ্যোগ ও সিন্ডিকেট ভাঙা: বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য গন্তব্যে বিমান ভাড়া অত্যধিক। সিন্ডিকেট ভেঙে এয়ার এশিয়া ও অন্যান্য বাজেট এয়ারলাইন্সকে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরিতে আহ্বান জানাতে হবে, যেন শ্রমিকরা স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে পারেন।
৪. প্রবাসী সহায়তা সেল প্রতিষ্ঠা: বাংলাদেশ হাইকমিশনের অধীনে পাসপোর্টের জন্য একটি পৃথক পাসপোর্ট সহায়তা সেল স্থাপন করতে হবে।
৫. বিনামূল্যে আইন সহায়তা: প্রতারণা, হেনস্তা, আটক অথবা শ্রম আইনের অপব্যবহারের শিকার প্রবাসীদের জন্য বিনামূল্যে লিগ্যাল এইড নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য হাইকমিশনে পেশাদার আইনজীবী নিয়োগ জরুরি।
৬. স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং: বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের জন্য অনলাইন ও স্থানীয়ভাবে টেকনিক্যাল ও ভাষাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তারা উচ্চ বেতনের চাকরির জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।
৭. বাংলাদেশি স্কুল ও সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা: প্রবাসী সন্তানদের বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস শিক্ষায় উৎসাহিত করতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি স্কুল এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
৮. ডিজিটাল হেল্প ডেস্ক বা অ্যাপ চালু: সরকারি পর্যায়ে একটি অনলাইন হেল্প ডেস্ক ও মোবাইল অ্যাপ চালু করতে হবে, যেখানে প্রবাসীরা জরুরি সমস্যা, অভিযোগ ও তথ্য পেতে পারবেন।
৯. প্রত্যাবর্তনকারী শ্রমিকদের পুনর্বাসন: দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণ ও প্রশিক্ষণভিত্তিক পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০. রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জবাবদিহিতা: প্রবাসীকর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রতারক ও স্বার্থান্বেষী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিসি) মালয়েশিয়া চ্যাপ্টার মনে করে, উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে যে অবদান রাখছেন, তার যথার্থ সম্মান ও স্বীকৃতির অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এই প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বর্তমান ইউনূস সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিসি) মালয়েশিয়া চ্যাপ্টার।
এসএম/টিএ