পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জাম, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও কারিগরি দক্ষতা ভারতকে অবাক করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক মাইকেল ক্লার্ক। ব্রিটিশ এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লার্ক জানান, পাকিস্তানের এই শক্তি প্রদর্শনকে ভারত ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে এবং তারা কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তিনির্ভর অনেক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে তাদের বহরে থাকা জে-১০ যুদ্ধবিমান। তার দাবি, পাকিস্তানের একটি জে-১০ যুদ্ধবিমান ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা ফরাসি রাফায়েল যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান তাদের এইচকিউ-৯ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও ব্যবহার করেছে, যা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
ক্লার্কের ভাষ্য, “ভারতীয়রা পাকিস্তানের প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার দিকটি দেখে কিছুটা চমকে গিয়েছে। বিশেষ করে চীনা অস্ত্রে সজ্জিত এই সক্ষমতা তাদের অবাক করেছে।” তবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের আগ্রাসী মনোভাব তাদের কাছে নতুন নয় বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল মূলত জেনারেল মুনিরকে ‘একটি বার্তা দেওয়া’। তারা বোঝাতে চেয়েছে যে, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত। তার অংশ হিসেবে ভারত পশ্চিমা নৌবহরের একটি বিমানবাহী রণতরী করাচি থেকে মাত্র ৩০০ মাইল দূরে মোতায়েন করে। এটা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের হুমকি, যদি পাকিস্তান তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে। শেষপর্যন্ত আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় দুই দেশ সংঘাত থামাতে রাজি হয়।
এই সংঘাত থামানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও তুলে ধরেন ক্লার্ক। তিনি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কঠোর চেষ্টায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে। যদিও শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা দেরিতে সক্রিয় হয়, পরে তাদের হস্তক্ষেপেই সমাধান আসে।
ট্রাম্প নিজেও শনিবার জানান, ভারত-পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে টানা চার দিনের হামলা-পাল্টা হামলার পর উভয় দেশ ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় পক্ষ থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই দ্বিপাক্ষিক সামরিক উত্তেজনার সূচনা ঘটে গত ৭ মে, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের হামলার মাধ্যমে। সেই হামলায় অন্তত ৩১ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। জবাবে পাকিস্তান দাবি করে, তারা তিনটি রাফায়েলসহ পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং বহু ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
এছাড়া শনিবার ভোরে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিতে হামলার জবাবে দেশটির বিমান বাহিনী জেএফ-১৭ থান্ডার থেকে ছোড়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের আদমপুর বিমানঘাঁটিতে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় বলে জানায় ইসলামাবাদ। হামলায় বিমানঘাঁটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ভারতীয় এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম উন্নত প্রযুক্তি, যার বাজারমূল্য প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। এটিকে ভারতের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষাগত ঢাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এসএস/টিএ